টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
আরাকান আর্মি ও আরসা দমনে সেনাশক্তি বাড়াচ্ছে মিয়ানমার?

আরাকান আর্মি ও আরসা দমনে সেনাশক্তি বাড়াচ্ছে মিয়ানমার?

মিয়ানমারের কারেন স্টেট থেকে আনা স্পেশাল ফোর্সকে মুংডুতে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনা মোতায়েন ও টহল জোরদার করা নিয়ে ঢাকার উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। আরাকান আর্মি (এএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ক্রমবর্ধমান তৎপরতায় নিরাপত্তা হুমকি দূর করতেই বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুং দৈনিক ইরাবতিকে এমনটাই বলেছেন।

জেনারেল মিন তুং বুধবার বলেছেন, ‘আমরা কেবল আমাদের অঞ্চলটির নিরাপত্তার জন্য এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের কাছে যে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা জোরদারে সামরিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না দুই দেশের সম্পর্কের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে।’

এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ও টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। বিশেষভাবে বুচিডং মংডু, রাচিডং, সিটওয়ে ও প্যালাতুয়ায় স্টাইক ফোর্স মোবিলাইজ করার খবর পাওয়া গেছে। নাফ নদী ও সিটওয়ের পাশে মিসাইলবোট, গানবোট, সেনাবাহী স্পিডবোট আনার খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মেকানাইজড লেজার সিস্টেম উইপেন, ইনফ্রারেট গগলস, থার্মাল ইমেজ সিস্টেম নিয়ে আসা হয়েছে। সীমান্ত সূত্রগুলো থেকে আরো জানা যাচ্ছে, সীমান্তের একেবারে নিকটবর্তী অঞ্চলে মিয়ানমার বাহিনী ইলেকট্রনিক মাইন বসাচ্ছে। রুশ ও বর্মী অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে এসব মাইন তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ৬টি স্নাইপার টিম মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব স্নাইপার দূর থেকে নিশানা করে হত্যার জন্য ব্যবহার করা হয়। এর আগে উত্তর কোরিয়া থেকে সংগৃহীত দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রাখাইন স্টেটে নিয়ে আসার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটির পাল্লা হলো ৫৪০ কিলোমিটার এবং অন্যটির পাল্লা ৭১০ কিলোমিটার। এর আগে ২০১৭ সালে আরসা মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিগুলোতে হামলা চালিয়ে ১২ জন কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনার সময়ও রাখাইনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এভাবে জোরদার করা হয়েছিল। এ সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের কারণে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ এবারো আরাকান আর্মি ও আরসার তৎপরতা দমনের জন্য সেনা মোতায়েনের কথা বলছে। এ মাসের গোড়ার দিকে আরাকান আর্মির সমর্থক হিসেবে চিহ্নিহ্নত বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ গ্রামে অগ্নিসংযোগের খবর ও ছবি ইরাবতি প্রকাশ করেছে।

মিয়ানমার সীমান্তে সেনা মোতায়েনে বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ নেই : ইরাবতি পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, আরাকান আর্মি (এএ) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ক্রমবর্ধমান তৎপরতার কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশী সীমান্তে নিরাপত্তা উপস্থিতি জোরদার করে তুলেছে।
মিয়ানমারের সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুং দ্য ইরাবতিকে বলেছেন, ‘বুচিডাং এবং মংডুতে আরাকান আর্মি এবং আরসার কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা উপস্থিতি তৈরি করছি। আমরা স্থল সীমান্তে বিশেষভাবে নিরাপত্তা জোরদার করেছি।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আরকান আর্মি এবং আরসা উভয়কেই সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে। আরকান আর্মি বর্তমানে উত্তর রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। আরসা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইনে নিরাপত্তা ফাঁড়িগুলোতে একাধিক হামলা চালিয়ে ১২ নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে। এ হামলার পর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়। এ সময় নির্বিচারে হত্যা ধর্ষণ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে সাড়ে ৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ছিল। রোহিঙ্গাদের ওপর এই জাতিগত নিপীড়ন নিয়ে মিয়ানমার তখন থেকে আন্তর্জাতিক চাপে পড়েছে।

গত রোববার, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশী গোয়েন্দা তথ্য মতে, মিয়ানমার আরকান আর্মিকে দমন করার অজুহাতে অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করে।

এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জাও মিন তুং বলেছেন, ‘আমরা কেবল আমাদের অঞ্চলটির নিরাপত্তার জন্য এটি করছি। শত্রু সম্পর্কে আমাদের গোয়েন্দাদের যে তথ্য তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিরাপত্তা রক্ষার কাজ চালাচ্ছি। আমার মনে হয় না এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

মিয়ানমারের নৌবাহিনী সীমান্ত হিসাবে চিহ্নিত নাফ নদীর তীরে এবং নিকটবর্তী উপকূলীয় জলসীমায় নিয়মিত টহল পরিচালনা করে। স্থল টহলও এখন বেড়েছে।
ইরাবতি উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশী পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে নৈমিত্তিক কথোপকথনের জন্য আমন্ত্রণ জানালেও সীমান্তে সেনা সমাবেশের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল জাও মিন তুং বলেছেন ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা তথ্যের কারণে টহল জোরদার এবং নিরাপত্তা তৎপরতা বাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা (বাংলাদেশ) সম্ভবত তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

মিয়ানমারের প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক ডা: অং মায়ো দ্য ইরাবতিকে বলেছেন, ‘এটা ভালো যে তাতমাডা [সামরিক বাহিনী] স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই মোতায়েনগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি নয়, এ ব্যবস্থা সম্ভাব্য হুমকি প্রতিরোধ করতে নেয়া হয়েছে। কোনো বিরোধের কারণে উভয় দেশের সম্পর্কের অবসান হওয়া উচিত নয়।’

ইরাবতির প্রতিনিধি বাংলাদেশের উদ্বেগ ও সতর্কতা সম্পর্কে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বা বিদেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital