সরকার শুধু নারী নির্যাতন নয় সারা বাংলাদেশকে ধর্ষণ করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ শুধু নারী ও শিশুদের রক্ষার জন্য নয়, নিজেদের অধিকার ও দেশকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ দেশের মানুষ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনো অত্যাচারী স্বৈরাচারী সরকারের কাছে মাথা নত করেনি। ইতিহাস কথা বলে। দেশের মানুষ বারবার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। যুবারা, তরুণরা তাদের গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি প্রেসক্লাবের সামনে শুধু সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সারাদেশে আমাদের এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে জাতি মহাসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এই সংকট তাদের অস্তিত্বের সংকট। এই সংকট এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ধ্বংস করে দেয়ার সংকট। আমরা অনেক আগেই লড়াই শুরু করেছিলাম আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের মা-বোনেরা সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি ব্রিটিশ আমলে নারীরা কিভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমাদের দেশেও এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আমাদের দেশের নারীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক নারী আছে যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাদের সম্ভ্রম চলে গিয়েছে কিন্তু তারা কখনও মাথা নত করেননি। এই যে শুরু থেকেই লড়াই করছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একজন নারী হয়ে তিনি লড়াই করছেন এদেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, এ লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবো। আমাদের এই লড়াইয়ে পরাজিত হবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচার সরকার। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখলাম জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বাংলাদেশের যে নারী নির্যাতনের হার বেড়ে গেছে, বাংলাদেশের ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেছে, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি একটা স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিয়েছেন। তার এই স্টেটমেন্টে বাংলাদেশের মানুষের সম্মান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই স্টেটমেন্টে এই দেশের মানুষের শান্তি ও সম্মান নষ্ট হয়ে গেল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- এই ধর্ষণের দায় তারা এড়াতে পারেন না। আমি বলি কি, তারা যে সরকার তৈরি করেছেন, এই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে যে অধিকার অর্জন করেছে আপনারাও গায়ের জোরে, বন্দুক ধরে, আগের রাতে ভোট চুরি করে, সে অধিকার হরণ করেছেন। ন্যূনতম যে গণতান্ত্রিক অধিকার সে অধিকার বাংলাদেশের মানুষের নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথা বললেও জেল হয়। সরকার আইন করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা। সরকারের বিরুদ্ধে যে কিছু একটা বলতে চায় তাদের ধরে নিয়ে কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, সারাদেশে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। সরকারকে এখন মানুষ কোনো ভয় পায় না। মানুষ ভয় পায় পুলিশকে। পুলিশ তো আওয়ামী লীগ সরকারকে বলে- ‘দেশের মালিক আমরা’। তাহলে সরকার কিভাবে পুলিশকে বলবে, সারাদেশে যে ধর্ষণ হচ্ছে, দেশের মধ্যে যে অন্যায় অবিচার করছে, মাদক কারবার করছে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করো। কারণ সরকারের লোকেরাই তো এসবের সঙ্গে জড়িত সবচেয়ে বেশি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা নিয়ে কি হলো? কিছুই হলো না। কয়েকদিন পত্রিকায় লেখালেখি হলো। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রধান একসাথে বৈঠক করলো। তারা বললেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিষয়টাকে হালকা করে দেয়া হলো। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা তো মনে করল যে আমরা বিচারের বাইরে চলে গেছি। দেশের মানুষকে অধিকার দিয়েছে যে সংবিধান সেই সংবিধানকে আপনারা শেষ করে দিয়েছেন।
দেশের নারী সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমার মা-বোনদের প্রতি আহবান রইল, আপনাদের প্রতি যে অন্যায় অবিচার চলছে আপনারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আপনাদের বলতে চাই, আর ঘরে বসে থাকা নয়। আর তরুণদের প্রতি আহবান জানাবো, এই দেশে যত যতটুকুই পরিবর্তন হয়েছে, তরুণরাই পরিবর্তন করেছে। এদেশে তো যা পরিবর্তন হচ্ছে ছাত্ররা এসেই পরিবর্তন করেছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত এক বছর আগে এই বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। নোয়াখালীতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে আছে এই আওয়ামী লীগ। সিলেটের গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এতে জড়িত ছাত্রলীগ। এ সরকারের কারণে এসব হচ্ছে। সরকার যে সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছেন এই সমাজে ভালো মানুষ হওয়ার উপায় নেই। যারা এদেশে গুন্ডা-বদমাশ, তারাই আপনাদের সাথে টিকে থাকবে, আর যারা এদেশের ভালো চায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায়, তাদেরকে ধ্বংস করে দেন আপনারা।
তিনি আরো বলেন, এই সংগ্রাম শুধু বিএনপি নয়। এই সংগ্রাম সারা জাতির। এই সংগ্রাম সারাদেশের মানুষকে, দেশকে, মা-বোনদের রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতি, গোত্র-বর্ণ, নারী-পুরুষ সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যে দানব সরকার আমাদের বুকের উপর চেপে বসে আছে তাদেরকে সরানোর জন্য। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকার পতনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আপনারা মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। মনের ভাষা বুঝুন। দেশের মানুষ স্বাধীন ও মুক্ত বাংলাদেশ চায়। আপনারা এদেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এসব আর আপনারা করতে পারবেন না।
‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ লেখা কালো কাপড় মু্খে মাথা ও মু্খে বেঁধে সংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ‘নিপীড়ক যেখানে, লড়াই হবে সেখান, ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই করে যাবি’ ‘মা-বোনেরা ভয় নাই, রাজপথে আমরা আছি’ ইত্যাদি স্লোগানে দেয়।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মানুষ এখন বাঁচতে চায়, তারা চুরি-চামরী-লুটপাট,দখলবাজী-মামলা-মোকাদ্দমা, শিশু-নারী নির্যাতন-ধর্ষণ নির্মুল ভ্যাকসিন চায়। শেখ হাসিনাকে বিদায় দেয়ার নামই হলো নির্মূল ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন এখন জনে জনে, ঘরে ঘরে, নারী পুরুষ-শিশুকে এক ডাকে এক যোগে এক কথায় বলতে হবে যে, ‘শেখ হাসিনা কবে যাবে, না শেখ হাসিনা এখনই যাবে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ এখন এই ডাকাতদের দল, লুটেরাদের দল, ধর্ষকদের দল। যখন সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে তখন আওয়ামী ছাত্র লীগ, আওয়ামী মহিলা যুব লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ রাস্তার মধ্যে নেমেছে আমরাও প্রতিবাদ করি, আমরাও ধর্ষকদের বিচার চাই। ফরটুয়ান্টি একেবারে।
শিশু ও নারী অধিকার ফোরামের আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও সদস্য মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের পরিচালানায় মানববন্ধনে বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।