টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সংসদ ভবন চত্ত্বর

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সংসদ ভবন চত্ত্বর

সারাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নারী অধিকার সংগঠন ‘প্রজন্মান্তরে নারীবাদী মৈত্রী’সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা।

বিকেল ৩টা থেকে নারী সংগঠনের সদস্যরা সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজার সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে।

বিক্ষোভকারীরা ‘ধর্ষণকারীদের দায়মুক্তির’ নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং ধর্ষণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

তারা জানান, নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের সহিংসতা কোনো পৃথক ঘটনা নয়, বরং যে সংস্কৃতি এই ধরনের সহিংসতার বিস্তার ঘটায়, তার বিরুদ্ধে মূলত সোচ্চার হওয়ার জন্য তারা একত্রিত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘ধর্ষকদের রক্ষা করা বন্ধ করুন’, ‘মুক্তি চাই, রক্ষা নয়’ সহ বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

এছাড়া, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতার ক্রমবর্ধমান ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষ ও নারী অধিকার আন্দোলন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় সেখানে সভা-সমাবেশ করা যাবে না।

কিন্তু বিক্ষোভে আসা নারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যেকোনো স্থানে শাস্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়ার অধিকার রয়েছে। তাই তারা সেখানেই অবস্থান করবেন। সমাবেশের বিষয়টি পরে ভেবে দেখা যাবে। কথা কাটি-কাটির মধ্যেই বিক্ষোভে আসা মানুষের জমায়েত বাড়তে থাকে। বিকেল চারটার দিকে শত শত নারী-পুরুষ ব্যানার ফেস্টুন-প্লাকার্ড নিয়ে সেখানে মিলিত হয়।

সমাবেশ চলাকালে ‘প্রজন্মান্তরে নারীবাদী মৈত্রী’র পক্ষ থেকে নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিণ হক ১০ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, মৃত্যু দণ্ড কোন সমাধান নয়, ধর্ষণের সংস্কৃতি সমূলে উৎপাটন চাই।

দাবিনামায় বলা হয়, আমরা সব ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসান চাই, সেই সহিংসতা পুরুষতন্ত্র প্রভাবিত রাষ্ট্রীয় কাঠামো কর্তৃক সমর্থিত হোক বা যে কোন পুরুষ বা পুরুষ দলের দ্বারা সংগঠিত হোক। সমাজের যে-কোন পরিসরে (কাঠামোগত, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক বা ব্যক্তিগত) যৌন সহিংসতার ঘটনায় ভূক্তভোগীকে দায়ী করা চলবে না। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা যে-কোন সহিংসতার জন্য পরিবার তাদেরকেই জবাবদিহি করবে। ধর্ষক কোনোভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও পরিবারে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাবে না। যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে, যেকোনো প্রয়োজনে, নারীরা চলবে নিরাপদে। সম্মান নারীর শরীরে, এমন ধারণার অবসান চাই। পাঠ্যক্রমে যৌনশিক্ষার পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সাইবার মাধ্যমকে ব্যবহার করে নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণের বিষয়টি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে আইন সংস্কার করতে হবে।

একইসঙ্গে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ কর্তৃক প্রস্তাবিত ১০-দফা দাবিসমূহ অনতিবিলম্বে মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ লিঙ্গ ও বয়স নির্বিশেষে বীনা সম্মতিতে যেকোনো যৌন কর্মকে অপরাধ গণ্য করে ধর্ষণের সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে।

ভুক্তভোগীকে দায়ী করার সকল ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বন্ধে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ সংশোধন করতে হবে। লিঙ্গ, ধর্ম, গোষ্ঠি, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, প্রতিবন্ধকতা, যৌন-পরিচতি যৌনতা নির্বিশেষে সব ধরণের ভূক্তভোগী ও সহিংসতা জয়ীর জন্য সুরক্ষা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ শ্লীলতাহানি ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

দেশে নারী ও মেয়েদের প্রতি যৌন সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়া মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগেরও দাবি জানান প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital