লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রেলস্টেশন থেকে নিয়ে গিয়ে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ৪ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে রকি (২৯) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত রকি উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগরের রজব আলীর ছেলে। তিনি পেশায় অটোরিকশা চালক।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
এদিকে স্থানীয় মাতবররা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বৈঠকে বসে ধর্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও ধর্ষিতা কিশোরী জানায়, রংপুরের কাউনিয়া এলাকার মামার বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী কিশোরী (১৫) তার বাবা মাহিনের সঙ্গে গত সোমবার (৫ অক্টোবর) লালমনিরহাটের পাটগ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে পরদিন সন্ধ্যায় লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে কাউনিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রেন কালীগঞ্জের কাকিনা স্টেশনে দাঁড়ালে ওই কিশোরী নাস্তা কিনতে নামে। এ সময় কাকিনা স্টেশনে নিজেকে রকি পরিচয় দিয়ে এক ছেলে জানতে চাইলে ওই কিশোরী কাউনিয়া যাচ্ছে বলে পরিচয় দিলে যুবক রকিও নিজেকে কাউনিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়।
এরই মাঝে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে দিলে রকি অটোরিকশা যোগে কাউনিয়া নিয়ে যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি অটোরিকশা যোগে রকি নামের ওই যুবক কিশোরীকে নিয়ে কাউনিয়া যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে মধ্যরাতে একটি সেচ পাম্পের নির্জন ঘরে নিয়ে রকিসহ আরও ৪ জন কিশোরীকে ধর্ষণ করে।
পরদিন বুধবার (৭ অক্টোবর) বিকালে মুখ না খোলার শর্তে কিশোরীকে ছেড়ে দেয় চার যুবক। এ অবস্থায় অসুস্থ কিশোরী পথ ভুলে চলতে থাকলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। স্থানীয়দের সহায়তায় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ধর্ষিতা কিশোরী।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতবররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করেন বলেও ধর্ষিতা কিশোরী দাবি করে।
জরিমানার টাকা কিশোরীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতবররা তাকে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে ধর্ষিতা। পরে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে কিশোরী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়।
ঘটনার বর্ণনা শুনে সাংবাদিকরা থানা পুলিশকে অবগত করে। পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। ধর্ষিতার দেওয়া তথ্য মতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। রাত ১১টার দিকে ওই চারজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এরপরই পুলিশ অভিযানে নামে। রাত ১২টার দিকে কাকিনা এলাকা থেকে রকিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ফরহাদ হোসেন বলেন, ধর্ষিতা কিশোরীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রাতেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।। দ্রুত বাকি আসামিদের ধরা হবে বলেও তিনি জানান।