অভিযোগ করা হচ্ছে, হাসপাতালের টিএইচএ শুভ্রা রানী দেবনাথ অ্যাম্বুলেন্স চালককে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ায় মুমূর্ষু অবস্থায় সুফিয়া বেগমকে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার করতে পারেননি জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। ফলে হাসপাতালের বারান্দায় মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার।
সুফিয়া বেগম উপজেলার চান্দুয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ মোড়লের স্ত্রী। সকালে তিনি মোহনপুর এলাকায় মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে বেলা সাড়ে দশটার দিকে তিনি ইজিবাইকের ধাক্কায় গুরুত্বর আহত হন। সাথে স্বজনরা কেউ না থাকায় পোনে ১১টার দিকে দুইজন পথচারী তাকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় কামালপুর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর বাবুল আক্তার বলেন, ওই বৃদ্ধার মাথা দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে তিনি অজ্ঞান ছিলেন। বৃদ্ধার সাথে কেউ ছিল না। দ্রুত তাকে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠাতে হতো। কিন্তু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালককে নিয়ে টিএইচএ কোথায় যেন ঘুরতে গেছে। সেই জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে বৃদ্ধা মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে ছিল। ডাক্তাররাও ভালো চিকিৎসা দেয়নি। এরপর খবর পেয়ে সাড়ে ১২টার দিকে স্বজনরা এসে ভাড়া করা প্রাইভেট কারে করে রোগীকে যশোরে নিতে চান।
প্রাইভেট কারে বৃদ্ধার অক্সিজেনের দরকার ছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিচ্ছিল না চিকিৎসকরা। পরে টিএইচএ’কে ফোন করে সিলিন্ডারের অনুমতি মেলে। কিন্তু হাসপাতালের দোতলা থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নামাতে নামাতে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। পরে বৃদ্ধার মেয়েরা লাশ বাড়ি নিয়ে যায়, বলেন কাউন্সিলর।
মণিরামপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুমন নাগ বলেন, বৃদ্ধার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। মাথায় গুরুত্বর আঘাত পাওয়ায় বারবার বমি হচ্ছিল। পরে মাথা দিয়ে কিছুটা রক্তক্ষরণ হয়। তাকে দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করার দরকার ছিল। অ্যাম্বুলেন্সের চালক বা বৃদ্ধার স্বজনরা কেউ না থাকায় তাকে রেফার করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একলাস হোসেন বলেন, স্যার নতুন গাড়ি পেয়েছেন কিন্তু চালক পাননি। তাই সকাল থেকে স্যারের গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে কয়েকটা ইপিআই কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। দুপুর একটার দিকে হাসপাতালে ফিরেছি।
মণিরামপুর হাসপাতালের টিএইচএ শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের চালককে নিয়ে ফিল্ডে গিয়েছিলাম। তাই হাসপাতালে একটু সমস্যা হয়েছে। আমি খবর পেয়ে দ্রুত ফিরে এসেছি। তারমধ্যে রোগীর স্বজনরা প্রাইভেট কার ভাড়া করে তাকে যশোরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তবে লাশের ময়না তদন্ত হওয়ার ভয়ে রোগীর স্বজনরা এসব নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।