টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বাদী অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার বাদী অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা ঢাবি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে আটদিনের অনশনের পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর থেকে নুরসহ ৬ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরণ অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা ফাল্গুনি দাস তন্বী জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জ্বর ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে আমরণ অনশনে থাকা ওই শিক্ষার্থীকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। এরপর রাত একটার দিকে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এসময় তিনি অচেতন ছিলেন বলেও জানান ফাল্গুনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান মুত্তাফি বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ওই শিক্ষার্থী যেভাবে অবস্থান করে প্রতিবাদ করছিলেন তাতে জ্বর হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে তার অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, গত ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় নুরুল হক নূর ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দু’টি মামলা করেন ওই ছাত্রী। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে নুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণের মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগেও তাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা শেষে রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে।

এই প্রেক্ষাপটে গত রোববার রাতে রাজধানীর মগবাজার ও আজিমপুর থেকে মামলার দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের এই দুই নেতা দীর্ঘ দিন নূরের রাজনৈতিক সহকর্মী, ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগের ওই মামলার আসামি।

ওই অভিযান চলার মধ্যে ফেসবুক লাইভে এসে ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট কথা বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি। মেয়েটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে নূর বলেন, ভিকটিমের পরিচয় তো ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের না কি ছাত্রী…। তার ভাই বলেছিল, নাজমুল হাসান সোহাগ তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। তাদের সাথে বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপোক্ত হয়েছিল। নাজমুল সোহাগের সাথে যে একটা ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে আপনারা দেখেছেন, লঞ্চের কেবিনে হাসিখুশিভাবে। যে লঞ্চের কেবিনে মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগটি এনেছিল, সেই লঞ্চের কেবিনে। একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্রাহীন। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায় একজন ছেলের সাথে বিছানায় গিয়ে, লঞ্চে হাসিখুশিভাবে।

নিজের এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে পটুয়াখালীর ছেলে নূর বলেন, লঞ্চে পাশাপাশি কেবিন। লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণ করা সম্ভব? একটা চিল্লানি দিলে তো আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে যায়। তারপর ধর্ষণ করে তারা নিচে নামে নাই? সেখানে মানুষের কাছে বলতে পারত না? ভাই সোহাগ আমাকে ধর্ষণ করেছে, তাকে ধরেন।

মেয়েটির অভিযোগ, একই বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী হওয়ায় এই পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ হয়। সেই সম্পর্কের জের ধরে ৩ জানুয়ারি লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ মামুন। তখন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ তার পাশে দাঁড়ান। চিকিৎসায় সহায়তা করার পর মামুনকে খুঁজে পেতে সাহায্যের কথা বলে চাঁদপুরে নিয়ে ফেরার পথে নাজমুল সোহাগও লঞ্চের মধ্যে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’। পরে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তিনি নূরসহ তাদের অপর সহকর্মীদের কাছে গেলে প্রথমে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করলে চরিত্রহননের’ ভয় দেখান।

তার অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নুরুল হক নূর বলেন, ধর্ষণ করেছে জানুয়ারি মাসে। এতদিন মামলা করতে পারে নাই? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে পারে নাই? প্রক্টরের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে পারে নাই? থানায় একটা মামলা করতে পারে নাই? এগুলো অনেক বিষয় আছে। বেগম জিয়ার মতো নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাকে দুই কোটি টাকা না ছয় কোটি টাকার জন্য মিথ্যা মামলায় জেলে নিয়েছে। কাজেই সেখানে আমাদের কেউ হলে তো আর যুক্তি দিয়ে টিকবে না। যাই হোক, দেখা যাক। তবে আমাদের সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, ডাকসুর ভিপি নূর, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ হিল বাকি এবং নাজমুল হুদা- এই চারজনের ঘটনার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।

অপর দুই আসামির মধ্যে হাসান আল মামুন মেয়েটিকে চিনতেন বলে স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

নিজের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের বিষয়ে নূর বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, দুটি অভিযোগ তো প্রধান; তাকে আমি পতিতা বলে হুমকি দিয়েছি। যদি প্রমাণ করতে পারে, সেচ্ছায় ফাঁসি নেব। যদি প্রমাণ করতে পারে, তার সাথে আমার নীলক্ষেতে দেখা হয়েছিল বা মীমাংসার জন্য তার সাথে নীলক্ষেতে বসেছিলাম। এই দুটা অভিযোগের একটা যদি প্রমাণ করতে পারে, স্বেচ্ছায় ফাঁসি নেব। লাইভে এসে বললাম।

হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে ভিডিওতে নুরুল হক নূর বলেন, আমরা বার বার বলছি, আবারও বলছি, হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের দায়ভার আমরা নেব না। কারণ হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানি না। হাসান আল মামুন বলেছে, তারা একই বিভাগের ছাত্র, তার সাথে তার পরিচয় ছিল।কিন্তু ধর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কি না, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের কাছে কিছু বলেওনি। যেহেতু তার সাথে পরিচয় ছিল, সেখানে কিছু হতে পারে, সেটা একেবারেই উড়িয়ে দেব না।

ফেসবুক লাইভে এসে এসব বলার কারণ জানতে চাইলে নূর বলেন, যেই ঘটনার সাথে আমি জড়িত না, সেই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে যে আমার সম্মানহানি, আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, অবশ্যই তার ব্যক্তিত্ব, তার উদ্দেশ্য ও চরিত্র নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে পারি। তাছাড়া এতগুলো মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের পরিবারকে হয়রানি। এটা কোনো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না।

আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ওই ছাত্রীর অনশন নিয়ে নূর বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন অনশন দেখেছেন? ফ্যান চলে, স্যালাইন চলে, নাস্তার প্যাকেট, খাবার এবং সেখানে ছাত্রলীগ নেত্রীরা। ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ নেই তার পাশে। ছাত্রলীগ তাকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে। কাজেই তার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি। কোনো প্রমাণ ছাড়া আমার চরিত্রহনন করার চেষ্টা করছে, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই দিক থেকে আমি যা বলেছি তা যথাযথ, অবান্তর কিছু নয়।

সাইফুল ও নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ জানালেও নূর বলেছেন, তাদের সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনসহ তিনজনের খোঁজ ‘পাচ্ছেন না’। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ হিল বাকি, তিনজনেরই কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। তারা যদি নিরাপদে থাকত তাহলে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে হলেও জানাত। আমার মনে হয়, তাদের গুম করা হয়েছে। কারণ গতকালও ওই দুজনকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পরদিন গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

নূরের ফেসবুক লাইভকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ‘সাইবার বুলিংয়ের’ অভিযোগে শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেছেন।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital