টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে হাত – পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে হাত – পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে মেয়েসহ একই পরিবারের ৪ জনকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা।

ঘরের ভিতর হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতের কোন এক সময় কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিহত মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রাইহানুল ইসলামকে আটক করে। এদিকে, ঘটনার পরপরই সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ সিআইডি, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র‌্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পর থেকে এলাকার শত শত লোক ওই বাড়ি ও তার আশপাশে ভিড় জমায়।
নিহতরা হলেন, মাছ ব্যবসায়ী মোঃ শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ৯ বছরের শিশু পুত্র সিয়াম হোসেন মাহি ও ৬ বছরের শিশু কন্যা তাসমিন সুলতানা। হত্যাকারীরা এসময় ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু কন্যা মারিয়াকে হত্যা না করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। নির্মম ও লোমহর্ষক এ হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়রা জানায়, ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যায়। পরে দরজা খুলে দেখতে পায় সাবিনা খাতুন ও তার দুই শিশু তাসনিম ও মাহী একঘরে এবং আরেক ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ। একই পরিবারে থাকা নিহত মাছ ব্যবসায়ী শাহীনুরের ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি গোঙানির শব্দ শুনে দরজা খুলতে গেলে দেখেন বাইরে থেকে শিকল দিয়ে দরজা আটকানো। পরে তার চিৎকারে এলাকাবাসী এসে তাকে দরজা খুলে দেন। পরে সবাইকে খবর দেন। তিনি আরও জানান, হত্যাকারীরা সিঁড়ির ঘর দিয়ে ঢুকে তাদের খুন করে দরজায় শিকল দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশ ঘর থেকে একে একে পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাড়িতে তোলেন। সেখানে পুলিশের ক্রাইম সেকশন কাজ করছে বলে সংবাদকর্মী ও অন্য কাউকে নিহতদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশের প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক নিহতের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম আরও জানান, বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম নিজস্ব ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছের চাষ করতেন। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক সাড়ে ১৬ শতক জমি নিয়ে প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সাথে মামলা চলছিল। এই মামলা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। পরিবারের অন্যান্য স্বজনরা জানান, শাহিনুরের পিতা ডা. শাজাহান আলী কলারোয়া থানার দামোদরকাটি গ্রামের নূর আলীর ছেলে জনৈক আকবর হোসেনের কাছ থেকে ৩৪ শতক জমি ক্রয় করেন। এই জমির ক্রেতা ছিলেন ডা. শাজাহান ও তার প্রতিবেশী ওয়াজেদ আলীর ছেলে আকবর।
এদিকে জীবিত থাকা ৪ মাসের একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানাকে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন নিয়ে যান। পরে তিনি তাকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেন।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (ভারপ্রাপ্ত) হারান চন্দ্র পাল জানান, পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানসহ ঘটনাস্থলে সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র‌্যাব, পিবিআই এবং অন্যান্য গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঘর থেকে ৪ জনের লাশ বের করা হয়েছে। হত্যার প্রাথমিক কোন কারণও তিনি জানাতে পারেননি। তবে ধারণা করছেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে।
সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারেই অবস্থিত খলিসা গ্রামের নিহতের বাড়িতে শত শত লোক ভিড় করে। নিহত পরিবারের কান্নায় কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহত শাহীনুরের বৃদ্বা মা শাহিদা খাতুন আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শাহীনুরদের তিন ভাইয়ের এক ভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। তাদের বোন আছিয়া খাতুন বুক চাপড়ে বার বার আহাজারি করেন আর চিৎকার করে বলেন আমার মা ও আরেকটা ভাই এখানে থাকলে তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মাছ ব্যবসায়ী মোঃ শাহিনুর রহমানের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে। মামলার বাদী ময়না খাতুন একই উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital