দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তেই থাকে। সংক্রমণ এড়াতে ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। কয়েক দফায় সেই ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। দীর্ঘ এই ৮ মাসের করোনা বিপর্যয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার স্কুল। এবার সেই বন্ধের তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও।
কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা বলছেন, করোনায় অন্যান্য স্কুলগুলোর মতো বন্ধ রাখা হয় কিন্ডারগার্টেনগুলোও। এই বন্ধের মধ্যে অভিভাবকরা নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধ করছেন না। যার ফলে ৯৯ শতাংশ ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। এমনকি বাসাভাড়াও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আয় না থাকায় ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে। অন্যদিকে বেতন না পেয়ে শিক্ষকরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উদ্যেক্তারা বলছেন, স্কুল খুললেও অনেক শিক্ষার্থী হয়তো কিন্ডারগার্টেনে ফিরবে না। আবার অনেক উদ্যোক্তাও গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন বা যাচ্ছেন। আবার শিক্ষকেরাও চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।
হবিগঞ্জের একজন শিক্ষক এখন চা-কফি বিক্রি করছেন। দিনাজপুরের একজন শিক্ষক রাজমিস্ত্রি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের একজন শিক্ষক নৌকা চালাচ্ছেন। আগামী মার্চের মধ্যে স্কুল খুলে না দিলে দেশে কিন্ডারগার্টেনের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে আর চলছে না। আমরা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘সব নয়, তবে ভালো মানের কিন্ডারগার্টেনগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ কারণে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, ‘যেসব কিন্ডারগার্টেন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের শিক্ষার্থীরা বা যেসব অভিভাবক গ্রামে চলে গেছেন তারা তাদের সন্তানদের কাছাকাছি সরকারি স্কুলে টিসি ছাড়া ভর্তি করাতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমরা এরই মধ্যে সার্কুলার জারি করেছি।’
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো খুলে দেয়ার দাবি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান গণশিক্ষা সচিব। তিনি বলেন, ‘কোনো স্কুলের জন্য আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ নেই। সব স্কুল একসঙ্গে খুলবে।’
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সরকারের কাছে কিন্ডারগার্টেনের চিত্র ভালো নয়। সরকার চাইছে শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলে ফিরিয়ে আনতে। এ কারণে প্রথম শ্রেণির আগে দুই বছরের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে। ফলে চার বছর বয়সে শিক্ষার্থীরা সরকার পরিচালিত স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে। যার ফলে ভালো মানের কিছু কিন্ডারগার্টেন টিকে থাকলেও চিরতরে হারিয়ে যাবে নিম্নমানের স্কুলগুলো।