ঢাকার ধামরাইয়ে শীতের সবজিতে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কৃষকরা আগাম অনেক প্রকারের সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছে। নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ জমি শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে। এসব জমিতে উৎপাদিত লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, মূলা শাক, পালং শাক, লাল শাক, লাউ শাক, মিষ্টি লাউ ধামরাইবাসীর চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা দেখছেন লাভের মুখ।
ধামরাইয়ের কৃষকরা নিয়মিত সবজি বাজারে বিক্রি করছে আবার নতুন সবজি বাজারে উত্তোলনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আবার কিছু সবজি আগাম বাজারে বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে অতিরিক্ত লাভের আশায়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জমিতে এখনো লাল শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ তুলতে কৃষক কৃষাণিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে নানান আগাম শীতকালীন সবজি। এতে দাম সাধারণ জনগণের সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে।
ছবি ১: শীতের সবজির বাম্পার ফলন
অপরদিকে, আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অনেকেই বিক্রি করেছেন ক্ষেতের সবজি, দামও বেশ ভালো পেয়েছেন। এ বছর বন্যার কারণে সবজি চাষে একটু দেরি হলেও খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে ধামরাইয়ের কৃষকদের।
ফলে প্রতি বছরই চাষিরা ঝুঁকছেন আগাম সবজি চাষের দিকে। সবুজের সমারোহ আর কৃষকের মনের সবুজ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদিত শীতকালীন আগাম সবজি হাট-বাজার গুলোতে উঠতে শুরু করায় কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করে কৃষকও বেশ ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সেইসাথে কাকডাকা ভোর থেকে জমে উঠেছে এই আগাম শীতকালীন সবজির বাজার।
উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের কাটাখালি এলাকার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে আমাদের সবজি নিয়ে চিন্তা করতে হতো। সারাদিন জমি থেকে সবজি তুলে ভোর রাতে ঢাকার দিকে রওয়ানা দিতাম বিক্রির জন্য। গাড়ি ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে লাভ চোখেই দেখতাম না। এখন আমরা পাশেই আজাহার চেয়ারম্যানের আরত, ধামরাই বাজার, কালামপুর বাসস্ট্যান্ডের বাজার, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের আমতলী বাজার থেকেই সবজি বিক্রি করতে পারি। ঢাকা থেকে ব্যাপারী এসে সকল সবজি ক্রয় করে নিয়ে যায়।
ছবি ২: শীতের সবজির বাম্পার ফলন
কাটাখালি এলাকার সবজি চাষি নজরুল মিয়া বলেন, বন্যার পরপরই আমি ধনিয়া পাতা ১ বিঘা, কপি ২ বিঘা, খিরা ১ বিঘা, মুলা ১ বিঘা, টমেটো ২ বিঘা চাষ করেছি। এছাড়াও লাউ শাক এখন বিক্রি করিতেছি। এই সব সবজি শেষ হলেই শসার চাষ করবো। লাভও বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। নিজের জমিতে প্রায় ২০ বছর ধরে এই সবজি চাষ করে থাকে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও সোমভাগ ইউনিয়নের সোমভাগ এলাকার মনির হোসেন বলেন, আমি তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে ও আমার আরো তিনসহ ৬ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি। তিন বিঘা জমিতে ১০ হাজার কপি চারা লাগিয়েছি। তবে বর্তমানে কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করছি। লাভও বেশ ভালো পাচ্ছি। আমরা যদি একটু সরকারি সহায়তা পেতাম তবে আরো ভালো করতে পারতাম। তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকায় প্রায় ৩ শত বিঘা জমিতে সবজি চাষ করা হয়। এমন কোনো সবজি নাই যা এই এলাকায় নাই।
আব্দুর রশিদও তার দের বিঘা জমিতে কপি, ২ বিঘা জমিতে টমেটো লাগিয়েছে।
তবে নজরুল ও মনিরের সাথে কয়েকজন কৃষক দুঃখ করে বলেন, আমাদের এখানে সবজি চাষ করতে গিয়ে এখনো কোনো কৃষি কর্মকর্তা দেখি নাই। প্রয়োজনে সবজির বীজ, সার, বিষ আমরা নিজের টাকা দিয়েই কিনে আনবো। তাও যদি তারা দেন। তবে সরকারি সহযোগিতার আশা করেন তারা।
এছাড়াও উপজেলার ফুকুটিয়া, দেপাশাই, সূয়াপুর, রোয়াইল, গাঙ্গুটিয়া, মারাপারা, কুশুরা ইউনিয়ন, যাদবপুর ইউনিয়নসহ প্রায় জায়গায় প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।
বর্তমানে সবজির দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যেই। যেখানে ১ কেজি কপি এখন ৪০ টাকা, সিম ৮০-১০০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, লাউ ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা আটি, লাউ শাক ২০ টাকা, খিরা ৩০-৩৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা। যা পূর্বের তুলনায় অনেক কম।
ছবি ৩: শীতের সবজির বাম্পার ফলন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, এই বছর ধামরাইতে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছে এবং আশা করা হচ্ছে এতে মোট ৫৪ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি শাক-সবজি উৎপাদিত হবে। এতে কৃষকরা প্রচুর লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে ধামরাইয়ের কৃষকরা আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন। তিনি বলেন, সবজি ক্ষেতে যাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করেই ফলন বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়েও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের।
তবে, বর্তমানে ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে fiac সেন্টার রয়েছে। যেখান থেকে কৃষকেরা কৃষি সেবা পেয়ে থাকে এবং যেকোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে থাকে। আমাদের ১০ জন কৃষি কর্মকর্তা প্রতিদিন কৃষকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে এবং বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আমাদের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা আসে তা আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে থাকি।