টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
মামুনুল হক-ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর’

মামুনুল হক-ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর’

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িত মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে ইন্ধন দিয়েছেন দুই শিক্ষক। রোববার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার। তিনি জানান, ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন।

সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাওলানা মামুনুল হক ও সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবু বক্কর ও সবুজ ইসলাম গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন। ঘটনার রাতে তারা দুজন একসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পাঁচ রাস্তার মোড়ে যান। ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যবহৃত বাঁশের মই বেয়ে দুজন ওপরে ওঠেন। এরপর সবুজ পিঠে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করেন। দুজন মিলে ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন। ৮ মিনিট ধরে ভাঙচুরের পর তারা আবার হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরে যান। শনিবার সকালে তারা বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমিন ও ইফসুফকে জানান। তারা দুই ছাত্রকে পালিয়ে যেতে বলেন। দুই ছাত্র পরে তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই চারজনকে ধরে ফেলেছি। তাদের দুজন জড়িত ছিল এবং তাদের কথামতো আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।’

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদের নাম বেড়িয়ে আসবে, তাদের নামেই মামলা হবে।

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিম সভ্যতার যুগে, আলবেরুনি বলেন, ইবনে বতুতা বলেন, তাদের ভাস্কর্য বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে। সেগুলো কেউ ভাঙছে না। আমরা বলছি, ভাস্কর্য মানেই পূজা নয়; ভাস্কর্য মানেই তাকে ধরে রাখা। তাঁর যে অবদান দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, সেটাকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করা।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘অনেক ইসলামিক দেশে মুদ্রার মধ্যে বাদশাহদের ছবি রয়েছে। সৌদির বাদশাহর ছবি রয়েছে, পাকিস্তানের কায়েদে আজমের ছবি রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি রয়েছে। সেটা পকেটে নিয়ে আমরা ঘুরছি। অথচ একটি ভাস্কর্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাক্ষী হয়ে থাকবে, সেটা আমরা ধ্বংস করতে চাইছি।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তার বিষটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ২টা ১৬ মিনিটের দিকে পায়ে হেঁটে এসে দুই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে উঠে হাতে থাকা লাঠি বা লোহার কোনো জিনিস দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে। গভীর রাত হওয়ায় এর পর নির্বিঘ্নেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়।

শনিবার সকালে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ এবং জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। সন্ধ্যায় মিছিল থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital