বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কথা বলেছেন অনেকেই। অনেকে আবার গণমাধ্যমকেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সক্রিয়তা মূলত এর সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষের জীবিকা ও অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের বাস্তবতায় লেখকদের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু বেশিরভাগ প্রকাশক থেকে শুরু করে ছাপাখানার কর্মী, মালিক, বাঁধাইখানার শ্রমিক, এমনকি দোকান ভাড়া থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও এর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
‘যেখানে এই করোনাকালে শপিং মল থেকে শুরু করে সব ধরনের জন-জমায়েতই আমরা দেখছি। নানান সভা-সমাবেশ, ওয়াজ-মাহফিল, মুক্ত গ্যালারিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ পর্যন্ত। সেখানে করোনার দোহাই দিয়ে কেন কেবল বইমেলাই স্থগিতের প্রস্তাব উঠছে, বিষয়টি পরিষ্কার নয়।’
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান তার একটি পোস্টে বইমেলা না হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘কয়েকটি টিভি ও অনলাইন মিডিয়ায় দেখলাম, বইমেলা এবার হচ্ছে না। স্থগিত হবে। মেলা নাকি এবার ভার্চ্যুয়ালি হবে। ভার্চুয়াল বইমেলাটা কী জিনিস? এখানে কি বই বিক্রি হবে? ভার্চ্যুয়ালি বই বিক্রির জন্য তো রকমারি.কম আছে। আরো অসংখ্য অনলাইন বই বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে। পাঞ্জেরী, পাঠক সমাবেশ, বাতিঘরসহ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বই বিক্রি করছে। বাতিঘরের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করলে বই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। তাহলে ভার্চুয়াল বইমেলার আলাদা বিশেষত্ব কোথায়?’
ভার্চুয়ালি আবার বইমেলা হয় কী করে? প্রশ্ন করে লেখক ও সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্ট সৈয়দ তানজীনা ইমাম বলেন, ‘মহান একুশে গ্রন্থমেলা কি শুধুই বই ব্যবসা? বইমেলা লেখক পাঠক প্রকাশকসহ কত শত মানুষের মিলন মেলা। একুশে গ্রন্থমেলা এ ভূখণ্ডের ঐতিহ্যের অংশ।’
তিনি আরো বলেন, কোভিড ১৯ মহামারির কারণে শপিং সেন্টার কি বন্ধ আছে? শপিং সেন্টারগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না এমন যানজট। বন্ধু-বান্ধবদের টাইমলাইন ভর্তি বিভিন্ন অবকাশ কেন্দ্র আর রিসোর্টে বেড়ানোর ছবি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিজগিজ করছে মানুষ। কই এসব ক্ষেত্রে তো কোনও নিষেধাজ্ঞা দেখি না। আমরা ভার্চুয়ালি নয় একচুয়ালি বইমেলা চাই। প্রয়োজনে আরও বড় পরিসরে আরও ছড়িয়ে দূরে দূরে স্টল তৈরি করেন।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় এবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী বছরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ভার্চুয়ালি কীভাবে আয়োজন হবে এবং বইমেলার জন্য স্টল বসিয়ে কোন মাসে আয়োজন করা সম্ভব হবে সেসব বিষয়ে আগামী রোববার কিংবা সোমবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক কমিটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবছর এই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা চাঙা থাকেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে প্রকাশনায় ও স্টল বরাদ্দে ভাটা পড়েছে। স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাদের আগ্রহই ছিল না। গতবার একুশে গ্রন্থমেলায় ৫৬০ প্রতিষ্ঠান স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়েছিল, এবার এ পর্যন্ত ৮৬ স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ হয়েছে।
জানা গেছে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার স্টল বরাদ্দের শেষ সময় ছিল ৭ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ৮৬ জন স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত দুই সমিতি ‘বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’র কেউই স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেননি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার পহেলা ফেব্রুয়ারি বইমেলা হচ্ছে না। তবে আমরা যদি দেখি, জানুয়ারি মাসে সময় ভালো যাচ্ছে, তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়োজন করবো। তবে অবস্থা বিবেচনা করে স্টল বসিয়ে পহেলা ফেব্রুয়ারির উদ্বোধনী তারিখ স্থগিত করলাম। এই তারিখ থেকে ভার্চুয়াল মেলার আয়োজন করা হবে। মেলা বাতিল হয়নি। শুধু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত তারিখে মেলা শুরু হবে না।
এর আগে, করোনার কারণে আসন্ন অমর একুশে বইমেলা স্থগিত করার প্রস্তাব করে বাংলা একাডেমি। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই বিক্রির এই বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা বাংলা একাডেমিকে সুপরিকল্পিত গ্রন্থমেলা আয়োজনের জন্য ভাবিয়ে তোলে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার উত্তাপ রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।