টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
ভারতের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ভারতের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ভালো চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশি রোগীদের দৌড়ঝাপ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। দিল্লি-চেন্নাই গিয়ে চিকিৎসার পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচও করে আসছেন বহু বাংলাদেশি। তবে খোদ দিল্লিতেই যে চিকিৎসা সেবার নামে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ, অবহেলা, দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে তা একটি ঘটনায় উঠে এসেছে।

সম্প্রতি দিল্লি অ্যাপলো হসপিটালের ভিজি রাজকুমারী নামে এক চিকিৎসকের দুর্ব্যবহার আর অবহেলার শিকার হয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের পলিটিক্যাল এডিটর ফারাজী আজমল হোসেনের স্ত্রী জিন্নাতুন বাকিয়া (৫৮)। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্জন ডা. ভিজি রাজকুমারীর চরম অবহেলা, উদাসীনতার কারণে জিন্নাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই সাংবাদিক। নিচে সেই স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো-

ডা. ভিজি রাজকুমারী। ছবি: সংগ্রহ

“ইনি দিল্লি অ্যাপলো হসপিটালের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্জন ডা. ভিজি রাজকুমারী। বাংলাদেশসহ আশপাশের অনেক দেশের কিডনি রোগীর কাছে খুবই পরিচিত মুখ। দিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালে যারা আসেন এই কঠিন রোগের চিকিৎসা নিতে কিংবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য তাদের কাছে এখন এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এই রাজকুমারী!

টাকা ছাড়া আর কিছু চেনেন না তিনি! রোগীর খোঁজখবর নেয়া, অসুবিধা শোনা কিংবা সমস্যা দূর করার কোনো চেষ্টাই তার নেই। এক কসাই চিকিৎসক তিনি! সমস্যা আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা কল করলে তিনি রিসিভ করেন না। টেক্সট করলে জবাব দেন না সময় মতো! রোগী ফেলে রেখে চলে যান চেন্নাই। ভিজি রাজকুমারী এই কঠিন করোনাকালে রোগীদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই স্যাম্পল নেন।

আমি আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে গত প্রায় তিন মাস ধরে দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য ছিলাম। গত ২২ অক্টোবর রাতে নয়ডা অ্যাপোলো হাসপাতালে ডা. ভিজি আমার স্ত্রীর কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন এবং ঐ রাতেই তাকে দিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়। ২৮ অক্টোবর তাকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করার পর প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ আমার স্ত্রী এই হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিতে এবং CT SCAN করতে গিয়ে কোভিড আক্রান্ত হন। অতঃপর ২০ নভেম্বর তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে তার কিডনীতেও জটিল সমস্যা দেখা দেয়! এই সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে ডা: ভিজি সুদূর চেন্নাই চলে যান!

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং এ জন্যে বোর্ড মিটিং-এর দিনক্ষণ নির্ধারণে ডা: ভিজির সেক্রেটারি ও নয়ডা হাসপাতালের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়!

কিডনি রোগীদের রোগ ব্যবস্থাপনা জটিল ও সেনসেটিভ। অথচ বারবার বলা সত্ত্বেও হাইরিস্ক প্যাশেন্টদের জন্য রাজকুমারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেননি। এই কঠিন করোনাকালে একজন হাইরিস্ক প্যাশেন্ট হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আমার স্ত্রীকে স্যাম্পল দিতে হয়। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা হিন্দি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথা বলেন না। অথচ বাংলাদেশসহ অনেক দেশের রোগী ও তাদের স্বজনরা হিন্দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাদের জন্য নেই কোনো দোভাষী নেই। ফলে দু্র্দশাগ্রস্ত রোগী তাদের কষ্টের কথা বলতেও পারেন না। এই ডা. রাজকুমারী খুবই কর্কশ, রূঢ়ভাষী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ!

অ্যাপোলো হাসপাতালের মালিকরা তার নিকটাত্মীয় হওয়ায় তিনি কাউকে পাত্তা দেন না! তার চলাফেরা বেপরোয়া। কিডনি রোগী অপারেশনের পরে ৬ মাস হাইরিস্কে থাকেন। অথচ লোকে গিজগিজ করা এই হাসপাতালে সেইসব রোগীর স্যাম্পল কালেকশানেও আলাদা কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কি নিষ্ঠুরতা!

ফারাজী আজমল হোসেন। ছবি: সংগ্রহ।

এই বেহাল অবস্থার কথা জানানোর জন্যে আমি ভারত সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু মি. হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার শরনাপন্ন হতে হয়। তিনি অ্যাপোলো হাসপাতাল গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেন। হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীমতি সঙ্গীতা রেড্ডী তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সম্ভব সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর আমার স্ত্রীর অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকলে চিকিৎসকদের টনক নড়ে।

প্রায় সপ্তাহ খানেক যাবৎ ডা. ভিজি চেন্নাইতে অবস্থান করেন! শ্রীমতি রেড্ডির কঠোর নির্দেশ পেয়ে অবশেষে ডা. ভিজি গত ৪ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে ফিরে আসতে বাধ্য হন বটে, কিন্তু শুরু হয় তার প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ! সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১-৫৩ মিনিটে তিনি আমার মোবাইল ফোনে পাঠানো টেক্সট-এ জানান, ‘’Her heart rhythm abnormality is under control. We are worried about lungs and spo2’’। এরপর তিনি আর আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করেননি।

এক এক পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর আমার স্ত্রীকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেয়া হয়! শুক্রবার আমার স্ত্রীর মৃত্যুর ৪/৫ ঘণ্টা আগে ডা. ভিজি অন্য একজন ডাক্তারকে দিয়ে আমার মোবাইলে পাঠিয়ে বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে আমাকে হাসপাতালে গিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলেন। আমি যথাসময়ে হাসপাতালে তার সাথে সাক্ষাৎ করি। এ সময় তিনি আমাকে কৈফিয়তের সুরে বলেন, কেন তার বিরুদ্ধে অ্যাপোলো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সঙ্গীতা রেড্ডির কাছে কমপ্লেইন করা হয়েছে। জবাবে আমি আমার স্ত্রীর সুচিকিৎসার বিষয়ে তার অসহযোগিতা এবং ঘুষ গ্রহণের বিষয় তুলে ধরি। এতে তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে যান। কথা আর না বাড়িয়ে আমি সেখান থেকে প্রস্থান করি।

ফারাজী আজমল হোসেনের স্ত্রী জিন্নাতুন বাকিয়া। ছবি: সংগ্রহ।

এরপর রাত ৯টার দিকে আইসিইউ থেকে একজন নার্স আমাকে মোবাইলে কল দিয়ে হাসপাতালে যেতে বলে। আমি সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে যাই। তখন কর্তব্যরত নার্স আমাকে আমার স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ জানায়। আমি আইসিইউ’র ২১২২ নম্বর বেডে দেখি আমার স্ত্রীর নিথর দেহ পড়ে আছে! সেই দৃশ্য দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি! সেই কষ্টের কথা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।

তাই আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, যারা এই হাসপাতালে বিশেষ করে কিডনি চিকিৎসার জন্যে আসছেন আমি তাঁদের সাবধান হতে বলছি। এখানে এসে জীবনের ঝুঁকি নেবার আগে দশবার ভাবুন।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital