‘ইস্তিগফার’ হলো- আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর তাওবাহ হলো- ফিরে আসা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহর ক্বসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও অধিক ইস্তিগফার করি (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) এবং তাওবাহ করি।” (বুখারী ৫/২৩২৪)
ইস্তিগফার যে কোন শব্দেই করা যায়। এমনকি “ইয়া আল্লাহ! ক্ষমা করুন আল্লাহ, গ্রহণ করুন আল্লাহ, কবুল করুন আল্লাহ” বলে দু’আ করলেও হবে। তবে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব শব্দে বা বাক্যে ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করেছেন, সে সব শব্দ বা বাক্যের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে অতি উত্তম! নিম্নে হাদীসে বর্নিত কিছু ‘ইস্তিগফার’ বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার কিছু শব্দ বা বাক্য দেয়া হলো:
১. ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ -(আস্তাগফিরুল্লাহ), শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ বলা। যার অর্থ- হে আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। “রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সলাত শেষে ৩ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন।” (মুসনাদে আহমদ- ২২৪০৮)
২. ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻻَّ ﻫُﻮَ، ﺍﻟﺤَﻲُّ ﺍﻟﻘَﻴُّﻮﻡُ، ﻭَﺃﺗُﻮﺏُ ﺇﻟَﻴﻪِ
(আস্তাগফিরুল্লাহাল ‘আযীম আল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল হাইয়্যুল ক্কইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলায়হি)। অর্থাৎ ‘আমি সে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই। যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছেই তাওবা করছি।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই দু‘আ পাঠ করবে: আস্তাগফিরুল্লাহাল আযীম, আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হু ওয়াল হাইয়্যুল ক্কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’, সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে। (আবু দাউদ-১৫১৭)
৩. ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻰَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ
(রব্বিগফিরলী ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম)। অর্থাৎ- ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা গ্রহণকারী, অতি দয়ালু।’ এক সাহাবী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু’আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছি।’ (আবু দাউদ -১৫১৬)
৪. ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻪ
(আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি)। অর্থাৎ- ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।’ আবু হোরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাইতে কাউকে অধিক এই ইস্তিগফার বলতে শুনিনি! (নাসায়ী কুবরা- ১০২১৫)
৫. ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
(সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, আসতাগফিরুল্লাহি ওয়া আতুবু ইলাইহি)। অর্থাৎ- ‘আমি আল্লাহর প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশি বেশি এই দু’আ পড়তেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকালের আগেও এই দু’আটা অনেকবার করেছেন। (সহীহ মুসলিম- ৪৮৪)
তবে, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইস্তিগফার হলো,”সাইয়িদুল ইস্তিগফার”।
6- ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ، ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ، ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ، ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা সানা‘তু। আবূউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতি হবে’। [সহিহ বুখারি : ৬৩০৬]
ইস্তিগফারের ১৭টি উপকারিতা:
১. অধিক ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২. ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করেন।
৩. দীন পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪. আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।
৫. ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনইয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়।
৬. মানব ও জীন শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়।
৭. দীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯. বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০. দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর হয়।
১১. বেকারত্ব দূর হয়।
১২. আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩. মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪. হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫. কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬. মন্দ কজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭. আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু’আ করেন।