সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জানুয়ারি নিহত হন তরুণ অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রাজধানীর দারুস সালাম থানায় মামলা করেছেন অভিনেত্রীর পরিবার। সেই মামলায় মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিনেত্রীর বাসায় ফেরার পথে আড়াই ঘণ্টার হিসাব না মেলায় শামীমকে প্রধান অভিযুক্ত করে গতকাল রাত ১০টার পরে মামলাটি করেছে তার পরিবার।
মামলাটি করার সময় আশার মামা দুলাল সঙ্গে ছিলেন। তিনি জানান, মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ পুলিশের সামনে তিন রকম কথা বলেছেন। তাদের ফেরার কথা ছিল কালশী রোড হয়ে কিন্তু টেকনিক্যাল মোড়ে তিনি কীভাবে গেলেন?
তারা শামীমকে এই প্রশ্ন করলে তখন শামীম জানান, তিনি পথ ভুলে গিয়েছিলেন। দুলাল জানান, তার ভাগনি আশার ঢাকার প্রায় সব রাস্তাই চেনা। তাহলে কীভাবে পথ ভুল হলো? তা ছাড়া এই বাইকচালক পুলিশের সামনে বলেছেন, রোড পার হতে গিয়ে আশা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মোটরবাইকে থাকা অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় আশা রাস্তায় পড়ে যান। তার মাথার ওপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে যায়।
দুলাল বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ শামীমই নেশাজাতীয় কিছু খাইয়েছিল আশাকে। কারণ, আশা সুস্থ থাকলে শামীমকে ধরে বসত। আশার রাস্তায় ছিটকে যাওয়ার পর সে আশাকে একবারও ধরে নাই। শামীম আড়াই ঘণ্টা কীভাবে রাস্তায় ঘুরেছে, তার সঠিক উত্তর দিতে পারে নাই। সন্দেহ হওয়ায় তাকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত ট্রাকচালকের নামে মামলাটি করেছি।’
গতকাল রাত ৮টার দিকে অভিনেত্রী আশাকে দাফন করা হয়েছে। পরে রাতেই তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় মামলাটি করার। রাত ১০টা ২০ মিনিটে দারুস সালাম থানায় এসে মামলাটি করেন আশার পরিবারের সদস্যরা।
আশার পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হয় বনানী এলাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন আশা। ৪ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে আশা তার মাকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি বনানীতে আছেন। ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি বাসায় ফিরবেন। আশার মা-বাবা ধরে নিয়েছিলেন মেয়ে বাসায় ফিরতে বড়জোর সাড়ে ১১টা বাজতে পারে।
আশার বাবা আবু কালাম গণমাধ্যমে জানান, তার মেয়ে ফোন দেওয়ার ৫ মিনিট পরে তিনি আবারও আশাকে ফোন দেন। সেই সময় মেয়ের সঙ্গে তাঁদের নতুন বাসার কাজের ব্যাপারে সর্বশেষ কথা হয়। মেয়ে বাসায় আসছে ভেবে পরে আর তারা রাতে ফোন দেননি।
বনানী থেকে তাদের ফেরার কথা ছিল কালশী রোড হয়ে আশাদের মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায়। রাত প্রায় দুইটার দিকে আশাকে বহন করা মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদ অভিনেত্রী আশার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি, একটু টেকনিক্যাল মোড়ে আসেন।’
শামীম ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে বলেন, ‘আন্টি আশা আর নেই, মারা গেছে।’ এই তথ্য জানানোর সময় কথা বলতে বলতেই আশার বাবা আবু কালাম কেঁদে ফেলেন।
মামলার বিষয়ে দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল রাতেই আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় বাইকের চালক মো. শামীম আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত শামীম আহমেদ অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর পরিবারের ৬ থেকে ৭ বছরের পরিচিত। তাঁকে সন্দেহ হওয়ায় অভিনেত্রীর পরিবার শামীমকেসহ সড়ক আইনের ১০৫ ধারায় অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করেছে। আমরা মূল ঘটনা উদঘাটন করে অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
চার বোনের মধ্যে আশা চৌধুরী সবার বড়। রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশোনা করতেন তিনি।