টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
পাবনার চাটমোহরে পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে ৩০টি মৌচাক!

পাবনার চাটমোহরে পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে ৩০টি মৌচাক!

চাটমোহর-ফৈলজানা সড়কের পাশে মূলগ্রাম ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে অবস্থিত তিনটি বাড়ি এখন যেন মৌবাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়ি ৩টি এখন মৌমাছিদেরই দখলে বলা যায়! একটি বাড়ির ছাদের কার্নিশজুড়ে,দরজা-জানালার সঙ্গে, একটি বাড়ির চালের সাথে,বাঁশের সাথে আর অপর একটি বাড়ির দরজা,জানালা আর আঙিনায় ছোট আম গাছসহ বিভিন্ন গাছে ঝুলছে ৩০টি মৌচাক। ছোট ছোট আরো ২/৩টি মৌচাকও রয়েছে।

এরমধ্যে ইন্তার আলী নামের এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত পাকা বাড়ি। বাড়ির মালিক নাকি দেনার দায়ে নির্মাণাধীন বাড়ি-ঘর ফেলে রেখে ঢাকা চলে গেছে। অপর দুইটি বাড়ির এসব মৌচাকের লাখো মৌমাছির সঙ্গেই বসবাস করছেন বাড়ির লোকজন। বাড়ির মালিক আঃ মজিদ ও জাকির হোসেন।পাবনার চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে মূলগ্রামের শাহপুর গ্রামের তিনটি বাড়িতে এ দৃশ্য এখন শোভা পাচ্ছে।

শনিবার (১৭ জানুয়ারি) শাহপুর গ্রামে গিয়ে ৩টি বাড়ির চারদিক ঘরে দেখা গেল,কেবল মৌচাক আর মৌচাক। বাড়ির লোকজনের কোনো ক্ষতি করছে না তারা। যদিও একটু সতর্ক থাকতে হয় বলে বাড়ির লোকজন জানান।

বাড়ির মালিক জাকির হোসেন জানান,এর আগে বাড়িটিতে প্রতি বছর দু-একটা মৌচাক বসতো। তবে এবার এত মৌচাক বসবে তা তিনি কল্পনাও করেননি। পাশের ইন্তার আলীর পরিত্যক্ত বাড়িটিই মূলত মৌমাছির ঘাটি। সেখান থেকেই আমাদের পাশের দুই বাড়িতে এর বিস্তার। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি বলে সবার কাজকর্ম একটু বেশিই। মৌমাছিরও তো ছোটাছুটির অন্ত নেই। কাজ করতে গেলেই মৌমাছির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতেও মাছিগুলো ক্ষিপ্ত হচ্ছে না। মৌমাছিগুলো যেন তাদের পরিবারেরই সদস্য হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান,মৌচাক দেখার জন্য প্রতিদিনই এ গ্রাম সে গ্রাম থেকে মানুষ আসছে। মৌয়ালদের তাগিদ তো রয়েছেই। কবে কাটা যাবে মৌচাক। তবে যেদিন মৌচাক কাটা হয়,সেদিন রাস্তার লোকজনকে কামড়ও খেতে হয়। গ্রামীণ পাকা সড়কের পাশে বাড়ি ৩টি। এজন্য সেই পথে যাতায়াত করা লোকজনও মৌচাকের দৃশ্যটি উপভোগ করছেন।

এ গ্রামে কখনো এক বাড়িতে একসঙ্গে এত মৌচাক লাগেনি বলে জানান মূলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বকুল। তিনি বলেন,বাড়ি তিনটি সাধারণ বাড়ি। মৌচাকগুলো এবার তাদের বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি যোগ করেন।

আটঘরিয়ার আঃ রশিদ জানান,এক বাড়িতে এতগুলো মৌচাকের খবর পেয়ে দেখতে এসেছেন। বলেন,‘আমি এত মৌচাক একসঙ্গে এই প্রথম দেখলাম,মুগ্ধ হয়েছি।’ তিনি জানান,বাজারের মধু ভেজালে ভরা; তাই তিনি খাঁটি মধু সংগ্রহ করবেন এখানে থেকে। আঃ মজিদের স্ত্রী জানালেন প্রতি কেজি মধূ ৬ শত টাকায় তারা বিক্রি করছেন।

মূলগ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম মৌচাক দেখতে এসে জানান, বাড়ি ৩টির চারদিকে মৌচাকে ঘেরা। বাড়ির চারপাশ দিয়ে মৌমাছিদের নাচন। প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুস ছাত্তার (৭০) জানান,গ্রামে সেই আগের মতো আর মৌমাছির চাক বসে না। তাই খাঁটি মধুও পাওয়া যায় না। বহু বছর পর এত মৌচাক এক বাড়িতে দেখলাম।

সেই ছোটবেলা থেকে মধু সংগ্রহ করা আজকের মৌয়াল আঃ গণি বলেন,আগে মৌচাক বেশি ছিল তাই মধুও বেশি পেতাম। আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গৃহস্থের বাগান কিংবা বাড়ি থেকে মজুরি অথবা ভাগের বিনিময়ে যা মধু মিলত, তাতেই ৭-৮ মাস সংসার চলে যেত। এখন সেই চাক আর নেই। থাকলেও চাকে আগের মতো মধু নেই। এখন মধু সংগ্রহ করে মাসখানেকও সংসার চলে না। গ্রামের এই ৩টি বাড়িতে এত মৌচাক দেখে তিনিও আনন্দিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএ মাসুমবিল্লাহ জানান,চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে সরিষা মৌসুমে মৌচাষিরা ভিড় করে। তারা খেতে ধারে মৌবাক্স স্থাপন করেন। এবারও প্রচুর মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এ অঞ্চলে তিল,সরিষা,তিসির মতো মধুযুক্ত ফুলসমৃদ্ধ ফসল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। তবে মধুর সন্ধানে প্রকৃতগতভাবে মৌমাছিরাও বনে বাদারে গিয়ে মৌচাক তৈরি করছে। বাড়ি বা বাড়ির পাশের গাছে মৌচাক থাকে। কিন্তু যদি এতা পরিমাণ মৌচাক এক সাথে থাকে,তাহলে সত্যিই বিস্ময়কর। এলাকাটা সরিষা চাষ প্রধান এলাকা হওয়ায় মৌমাছিরা এখানে ভিড় করেছে।

 

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital