এবার ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা কয়েক ধাপে আয়োজন করা হবে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর পরীক্ষার জন্য মনোনীত হলে প্রার্থীর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে।

বৃহস্পতিবার উপাচার্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এবার ভর্তি পরীক্ষা কেমন হওয়া উচিত সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কবে পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, দেশের করোনার প্রাদুর্ভাব না কমা পর্যন্ত এই পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না। কবে পরীক্ষা শুরু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক আবেদন করতে ফি পরিশোধ করতে হবে। যাচাই-বাছাইয়ের পর পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা মোবাইলে এসএমএস পাবে। পরীক্ষায় বসার আগে তাকে ফি পরিশোধ করতে হবে।

আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন প্রার্থী আবেদনের ক্ষেত্রে কোথায় ভর্তি হবে ও ভর্তি পরীক্ষায় বসবে সে পছন্দ নিজেই করবে। এ জন্য ২০টি চয়েজ অপশন থাকবে। পরীক্ষার্থী নিজে নির্বাচন করবে।

তিনি বলেন, একসঙ্গে সকলের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো আসনে বসার মতো সুযোগ থাকবে তত জনকে এসএমএস দিয়ে ডাকা হবে। এভাবে কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা নেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষা মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্নের (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে।

মীজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি প্রশ্নের এক নম্বর করে মান বা মূল্যায়ন করা হবে। ভুল উত্তরের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে আলাদা ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি, এইচএসসির জিপিএ বড় একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তবে এবার যে পরিমাণ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হবে। লিখিত ভালো করেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কষ্ট হবে।

তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু এবার সবাই পাস করেছে, সেহেতু সবার হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্ভব হবে না। সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে তাও তো নয়। আমাদের আরও নানা রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার অনেক জায়গা আছে। সেখানে জায়গা খালি থাকে, কিন্তু আমরা শিক্ষার্থী পাই না। এবার আশা করি সেদিকে অনেকেই যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। এটা তাদের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।

জানা গেছে, এ বছর ২০টি পাবলিক ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন এবং আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি বিষয়ের উপর করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হবে।

২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতা

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৭, ব্যবসায় শিক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া সাড়ে ৬ এবং মানবিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৬ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০ নম্বর, রসায়নে ২০, জীববিজ্ঞান-গণিত এবং আইসিটি মিলে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। জীববিজ্ঞান, আইসিটি ও গণিতের মধ্যে যে কোনো দুইটি বিষয়ের উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ১০ নম্বর করে মোট ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

বাণিজ্য বিভাগের জন্য অ্যাকাউন্টিংয়ে ২৫ নম্বর, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্টে ২৫, আইসিটিতে ২৫, বাংলায় ১৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ১২ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ২৩ হাজার ১০৪ টি শুন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।