বিচারপতি মো. আশরাফুক কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। “সাভার থানা অসহায় পরিবার পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড বনাম বিজ্ঞ জজ, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আপিল ট্র্যাইব্যুনাল ঢাকা ও অন্যান্য” মামলার এই রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সকল প্রকার শ্রমজীবী মানুষ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শ্রমিক ভাইবোনদের রক্ত পানি করা টাকা আমাদের মত রাষ্ট্রের সকল বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের অন্ন সংস্থানের মাধ্যম। শ্রমিক ভাই বোনদের কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ, পড়ালেখাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা হয়। মেহনতি শ্রমিক ভাই-বোনেরা আমাদের মত সকল বেতনভোগীদের তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রদান করে এই জন্য যে, আমরা যেন আমাদের নিজ-নিজ দায়ীত্ব সৎভাবে, দক্ষতার সাথে এবং নিরপেক্ষতা ও দেশপ্রেমের সাথে করতে পারি। আমাদের মেহনতি শ্রমিক ভাই-বোনেরা কোনদিন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং দেশের সম্পদ লুট করার মতো কোন কাজ করে না। দেশের সম্পদ লুটতরাজ করে হাতেগোনা কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারি।
হাইকোর্ট বলেন, মেহনতি কৃষক-শ্রমিক ভাই বোনদের কষ্টার্জিত অর্থ সকল বেতনভোগী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু সংখ্যক বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কৃষক-শ্রমিক ভাই বোনদের সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ-এ লিপ্ত। মেহনতি কৃষক-শ্রমিকের রক্ত পানি করা অর্থ কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী লুটেরা বাহিনীর মত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। জনগণের বেতনভোগী এসব দুর্নীতিবাজ সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, বিচারপতিদের জনগণের আদালতে দাঁড় করানোর এখনই সময়। কেবলমাত্র তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণের সম্পত্তি দেখভালের সর্বশেষ স্তরে জনগণ বিচারকগণের উপর আস্থা রেখেছেন। সুতরাং বিচারকগণের গুরুদায়িত্ব হলো জনগণের সম্পত্তি যেন কোনো জোচ্চোর, ঠক, বাটপার এবং জালিয়াত চক্র গ্রাস করতে না পারে।
এই রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, যেকোন মামলার বিষয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণসমূহ যথেষ্ট যুক্তিসম্পন্ন হতে হবে। যুক্তিহীন রায় বিচার বিভাগকে জনগণের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করে। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণগুলি যুক্তিসম্পন্ন না হলে সে সিদ্ধান্ত বা রায় জনমনে আস্থাহীনতার সৃষ্টি করে। বিচারকের প্রজ্ঞা ও সততা ছাড়া মানসম্মত বিচার ব্যাবস্থা কল্পনা করা যায় না। বিচারকের প্রজ্ঞা-সততা এবং রায় প্রদানের কারণগুলো যদি যুক্তিসম্মত ও নৈতিকতাসম্পন্ন না হয় তবে সে বিচারব্যবস্থা উন্নত বিচার ব্যবস্থায় নিজেকে কখনোই অধিষ্টিত করতে সক্ষম হবে না। বিচারকের রায় হবে সহজ-সরল মাতৃভাষায় তথা বাংলা ভাষায়। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণগুলো হবে শ্রেষ্ঠ যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ও বিচারিক বিবেচিনাপ্রসূত। একজন সহজ সরল সাধারণ মানুষ পড়ে যেন আদালতের রায় বা সিদ্ধান্তের কোনো ভুল ধরতে না পারে।