গেল সপ্তাহে এফডিসির জসিম ফ্লোরে এক মহরত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ১০০ সিনেমার ঘোষণা দেন শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার মো: সেলিম খান। বাংলাদেশের ইতিহাসে একসঙ্গে সর্বাধিক ছবির ঘোষণাকে বিশ্বের নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার কেউ কেউ বলছে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এটি একটি স্ট্যান্ডবাজি! কেউ কেউ বিষয়টিকে পজেটিভলি দেখলেও, অনেকেই দেখছেন না।
ঘোষণাকৃত ১০০ ছবির সমন্বয়ক হিসেবে যুক্ত আছেন পরিচালক শাহীন সুমন ও অপূর্ব রানা। এই বিষয়ে কথা চাইলে নির্মাতা অপূর্ব রানা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘১০০ সিনেমার যে ঘোষণা আসছে এটাকে আমি স্বাগতম জানাই। একই দিনে একটা ইন্ডাস্ট্রি থেকে ১০০ সিনেমার ঘোষণা; এটা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এখন এটা কতটুকু কীভাবে হবে তা জানিনা কিন্তু এই ১০০ সিনেমা যদি হয় তাহলে এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হবে। যেখানে এত ছবির অভাব ছিলো, হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, তারপর বিদেশি ছবি আনতে চাচ্ছিলো সেখানে এই ঘোষণা অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় রকমের সুখবর এবং মিরাকেলের মত একটা বড় ঘটনা।
দেখছি, এখন অনেকেই কথা বলছে ছবির বাজেট নিয়ে। একজন পরিচালক হিসেবে আমি এটা বিশ্বাস করি যে, একজন পরিচালক যদি ২ কোটি টাকা দিয়ে ভালো সিনেমা বানাতে পারে তাহলে গল্প এবং ভালো লোকেশনে সে ২০ লাখেও সিনেমা পারবে। এটা নির্ভর করে পরিচালকের উপর; কে কোন এঙ্গেলে ছবি বানাবে! আমি আরও একটা কথা বলতে চাই যে, শাপলা মিডিয়া যেখানে ১০০ ছবির ঘোষণা করেছে ২০ লাখ টাকা বাজেটের সেখানে ২০টি ছবি আছে ভালো এবং বিগ বাজেটের। কম বাজেটেরও হচ্ছে বিগ বাজেটেরও হচ্ছে। পাশের দেশ কলকাতায় দেব, জিত যেখানে ২ কোটি টাকার ছবি করতেছে, সেখানে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ছবি করছে ২০ লাখ টাকা বাজেটের। মানদণ্ড নির্ধারণের জন্য বাজেট কোনো বিষয় না। ২০ কিংবা ৩০ লাখেও ভালো সিনেমা হতে পারে যদি পরিচালক ভালো গল্প ও লোকেশন সিলেক্ট করতে পারে। পরিচালক ভালো না হলে ৫ কোটি টাকা দিয়েও কিন্ত লাভ নেই।
নির্বাচনী স্ট্যান্ডবাজি কীনা, এমন প্রশ্নে এই নির্মাতার ভাষ্য, দেশে জাতীয় নির্বাচন যখন হয় তখন কিন্তু একটা নির্বাচনী মেনুফ্যাস্ট দেয়। আর কোনো সংগঠন হলে সেটা তার কৃতকর্মের জন্য পাবে। নির্বাচনের উছিলায় যদি ইন্ডাস্ট্রি ১০ টা সিনেমা পায় তাহলে এটা তো ভালো। এটাকে আমি পজেটিভলি দেখি।
এখানে একটা নায়ককে যদি ৫ লাখ টাকা রেমুনারেশনে নেওয়া হয় তাকে ১০টি ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ করলে হয়তো তাকে ৫০ ভাগ বা ৭০ ভাগ রেমুনারেশনের টাকা দেয়া হবে। তার মানে কিন্তু এই না যে, ৫০ লাখ টাকার ছবিটা ২০ লাখ টাকায় হচ্ছে! আমি পুরো বিষটিকেই পজেটিভলি দেখছি।’
একই প্রসঙ্গে পরিচালক শাহীন সুমন বলেন, ‘আমরা শাপলা মিডিয়ার পক্ষ থেকে ১০০ সিনেমার ঘোষণা দিয়েছি। আজকে থেকে ছবিগুলোর শুটিং শুরু হয়েছে। আজকে কক্সবাজারে একসাথে ১০টি ছবির শুটিং শুরু হয়েছে। অনেকেই দেখছি বলছে যে, ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু এসব ছবি নাকি হবে না! কিন্তু আমরা বলার জন্য বলিনি, কাজ শুরু করে দিয়েছি। সিনেমা নাই, হল বন্ধ। সিনেমার স্বার্থে, ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, কাজের স্বার্থে কাজ দরকার। এখন সিনেমাই যদি না থাকে তাহলে সিনেমা হল খুলবেই বা কেনো! প্রতি মাসে যদি ৩/৪টা সিনেমা হয় তাহলে হল কিন্তু খুলবে।
অনেকেই বলতেছে দেখি, এগুলা নাকি কম বাজেটের ছবি। শাকিব খান এগুলা নিয়ে অনেক বাজে কথা বলছে, ‘স্টুপিড’ বলছে। এগুলা বলা ঠিক হয়নি। সারা বছরে একটা ছবি করে আর শুধু নিজে একা খেতে চায়। আর বাকিরা না খেয়ে পথে পথে ঘুরবে! আমি শুধু একটাই কথা বলবো, আমাদের ছবির বাজেট কম না। আমাদের বাজেট ঠিক আছে। প্রত্যেকটাই ভালো মানের সিনেমা হবে। আর আমাদের পরিচালকদের গাইডলাইন দেওয়ারও লোক আছে। যেন সিনেমা ভালো হয় তারা সে বিষয়গুলো দেখবে। সিনেমার সংখ্যা যেন বাড়ে তাই সংশ্লিষ্ট সবাই নিজেরা অনেক স্যাক্রিফাইস করছে। যেন মানুষ কাজ করে খেতে পারে। এটাকে নেগেটিভভাবে দেখার কোনো কারণে নেই।’
স্ট্যান্ডবাজি প্রসঙ্গে এ নির্মাতা বলেন, আমি তো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব পদপ্রার্থী। এখন আমি যদি ১০০ সিনেমা এনে দিতে পারি, ১০০ কাজ এনে দিতে পারি; এখানে তো স্ট্যান্ডবাজির কিছুই দেখছি না আমি। আমি তো পেরেছি। যারা এসব বলে বেড়াচ্ছে তারাও পারলে সিনেমা এনে দেখাক, মানুষকে কাজ দিক। মানুষকে কাজ দেওয়াতে স্ট্যান্ডবাজির কিছু নেই। আমি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, অবশ্যই মানুষ আমার পাশে দাঁড়াবে।
যারা বলে বাজেট কম, তারা কারা? প্রশ্ন রাখেন নির্মাতা। তারা কী বংশপরম্পরায় বাজেট রেখে গেছে? বাজেট কীসের আবার, সিনেমা কী বাজেট দিয়ে হয়? তারা কী বাজেট ঠিক করে দিয়ে গিয়েছে যে এই বাজেটেই ছবি হবে! আমাদের এখানে বাজেট কোনো ফিক্সড নেই, সব ভালো বাজেটের সিনেমা। প্রত্যেকটা সিনেমাই ভালো হবে।