মূলত রোজার আগে বাজার কারসাজির মাধ্যমে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর এতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি জুলাই-ডিসেম্বরে চাল আমদানি হয়েছে ২৪২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি ছিল ১৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ। এই হিসেবে আমদানি বেড়েছে ১৬৫৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
গম আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত বছর জুলাই-ডিসেম্বরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৪৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি বেড়ে হয়েছে ৮৯৭ দশমিক ৪ মার্কিন ডলার। শতকরা হিসেবে আমদানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ভোজ্য তেল আমদানির তথ্যে দেখা যায় গত অর্থবছর তেল আমদানি হয়েছিল (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৭৩৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। আমদানি বেড়েছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চিনি আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত বছর জুলাই-ডিসেম্বরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২৮৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এ বছর আমদানি হয়েছে ৩৬০ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। আমদানি বৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ঢাকা মহানগরির বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করে থাকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির ৭ মার্চের বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, চিনি, ছোলাসহ প্রায় সবক’টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
টিসিবি জানিয়েছে, মোটা চালের দর এক মাসে বেড়েছে ৩২ শতাংশ। খোলা আটার দর বেড়েছে ১১ শতাংশ। লুজ সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। সব ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু চক্র।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নামে একটি সংস্থা রয়েছে; কিন্তু তাদের কার্যক্রমও তেমন লক্ষণীয় নয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের কাছে চাল মজুদ ছিল ৫ লাখ ৩৭ হাজার টন। মজুদ বাড়াতে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৪ লাখ টন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ ১৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। আমদানি শুল্ক সাড়ে ৬৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ১৮ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৭১ হাজার ৭৭০ এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫০ টন।
সয়াবিন তেলের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১০০-১০৫ টাকা দরে। গত নভেম্বর থেকেই তা বাড়তির দিকে। টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে, বাজারে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
দেশে মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয় খোলা তেল। গত চার মাসে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৮৮, অক্টোবরে তা বেড়ে ৯২-৯৩ টাকা হয়। নভেম্বরে আরেক দফা দাম বেড়ে ৯৫ টাকায় পৌঁছায়। এরপর থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্যটির দাম বাড়ে। ডিসেম্বরে ১০০ টাকা লিটার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে বাজারে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেল ১২০-১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা পাম অয়েলের ক্ষেত্রেও। অক্টোবরে যেখানে সুপার পাম অয়েলের লিটার ৯০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ১০৫-১১০ টাকা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরেও বাজারে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে মসুর ডাল মিলত। কিন্তু অন্য পণ্যের সঙ্গে এ নিত্যপণ্যটির দামও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা দরে।
বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা উর্ধমুখী হলেও বাজার করাসাজির সুযোগ নেই। বর্তমানে যেসব পণ্য বাজের রয়েছে সেগুলো আমদানি হয়েছে কয়েক মাস পূর্বে, ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করলে কঠরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া তিনি জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। শিগগিরই তার বাস্তবায়ন শুরু হবে।