মিয়ানমারের ভেতর কী ঘটছে তা নিয়ে এই প্রথমবার দেয়া এই সাক্ষাৎকারে ১২ জনের বেশি পুলিশ অফিসার বলেছেন তাদের নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করতে বা তাদের ক্ষতি করতে বাধ্য করা হবে এই আশংকায় তারা পালিয়ে গেছেন।
‘বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে আমাকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আমি তাদের বলেছিলাম আমি পারব না।’ মিয়ানমারের পুলিশ বাহিনীতে নয় বছর ধরে কাজ করেছেন নাইং। এটি তার আসল নাম নয়, নিরাপত্তার কারণে তার নাম বদলে দেয়া হয়েছে। এখন তার বয়স ২৭। তিনি ভারতের উত্তর পূর্বের মিজোরাম রাজ্যে লুকিয়ে রয়েছেন।
তার সাথে আমি কথা বলেছি। পালিয়ে আসা দলটির আরও কিছু পুরুষ ও নারী পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের বয়স বিশের কোঠায়। তারা বলেছেন সেনা বাহিনীর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করার পর তারা তাদের দেশ ও চাকরি ছেড়ে পালিয়েছেন। ‘আমার আশংকা ছিল সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষদের হত্যা বা ক্ষতি করতে আমাকে বাধ্য করা হবে,’ বলেছেন একজন অফিসার।
‘আমরা মনে করি সামরিক বাহিনীর একটা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা ভুল কাজ।’ মিয়ানমারের সেনা বাহিনী, যারা পরিচিত তাৎমাডো নামে, তারা পয়লা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গণতন্ত্রপন্থী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে লাগাতার প্রতিবাদ করছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৫০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিমে একটি শহরে পুলিশে নিচু পদমর্যাদার পুলিশ কর্মী নাইং। তিনি বলছেন ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ওই শহরে বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। তিনি বলেছেন বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে দুবার তিনি গুলি চালাতে অস্বীকার করার পর তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যে দমনপীড়ন চলছে তাতে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, আমেরিকা এবং আরও বেশ কিছু দেশ। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে সামরিক বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা সমালোচনা নাকচ করে দিয়েছে এবং বলেছে তাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং দেশটিকে একঘরে করা হয়েছে তা মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত।
পুলিশ অফিসারদের যে দলটির সাথে আমরা কথা বলেছি তাদের ধারণা আগামী কয়েকদিনে আরো পুলিশ অফিসার ভারতে ঢুকবেন। শুধু যে পুলিশ অফিসাররাই ভারতে পালাচ্ছেন তা নয়, আমাদের সাথে দেখা হয়েছে এক দোকানীর যিনি মিয়ানমার থেকে মিজোরামে পালিয়ে গেছেন। গণতন্ত্রকামীদের আন্দোলনে যোগ দিতে অনলাইনে সমর্থকদের উৎসাহ দেবার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার পর তিনি পালান।