টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
কিশোরের মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ

কিশোরের মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (১৪ মার্চ) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে অভিযোগকৃত যখম যাচাইয়ের জন্য ঢাকা মেডিকেলকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কিশোরের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কিশোর গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে রেখে ২০২০ সালের ২ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন করা হয় বলে মামলা অভিযোগ করেন কিশোর। নির্যাতন শেষে তিনি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে থাকা কিশোরকে গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট জামিন দিলে তিনি মুক্ত হন। এরপরই তিনি মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের ২ মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ১৬-১৭ জন সাদা পোশাকদারী লোক কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে আমাকে হাতকড়াসহ মুখে মুখোশ পরিয়ে অচেনা-অজনা নির্জন একটি জায়গায় নিয়ে যায়। আটকের আগে বিকালে বাসার কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজন বলল দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি পরিবর্তন করে প্যান্ট পরে নেন, সাথে একটা ভালো শট। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কিছুই বলেনি। ঘরে ঢুকেই তারা তল্লাশি শুরু করে। আমাকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ, পোর্টেবল হার্ডডিস্কসহ যত ডিজিটাল ডিভাইস ছিল সবই তারা অবৈধভাবে নিয়ে যায়। আমাকেকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনেন তখন বাসার সামনে ৬-৭ টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। এরপর আমাকে একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। আমার বাসার সামনে অনেক মানুষ জড়ো হয়। আমি তখন প্রচণ্ড জোরে জোরে চিৎকার করি। কিন্তু গাড়িতে অনেক বড় শব্দ করে গান বাজানো হচ্ছিল, হয়ত আমার চিৎকারের শব্দ বাহিরে শোনা যায়নি।

কিশোর বলেন, পরবর্তী সময়ে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে একটি পুরানো এবং স্যাতস্যাতে বাড়ির রুমের ভেতরে আনা হয়েছে। গাড়ির হরনের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর প্রজেক্টরে একের পর এক কার্টুন দেখিয়ে সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন আঁকছি এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পড় মারে। কিছুক্ষণের জন্য আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা এবং ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম। এভাবে কয়েক দফা অর্থাৎ ২ থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমার ওপর শারীরিক এবং মানসিক টর্চার অত্যাচার চালার পরবর্তী সময়ে আমি নিজেকে র‌্যাবের কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে মোস্তাক আহমেদের সাথে দেখা হয়। মোস্তাক আলাপ আলোচনায় আমাকে জানান, তাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল। এরপর গত ৬ মে আমাদেরকে রমনা থানায় পাঠানো হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ মে র‌্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মোস্তাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তারা রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয়।

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুস্তাক আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আই অ্যাম বাংলাদেশি (ইংরেজি হরফে লেখা) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটিতে সম্প্রতি কিশোর, লেখক মুস্তাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital