সোমবার বিকেল ৫টায় উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের বাড়িতে রাবেয়া-রোকাইয়া তাদের মা বাবার সাথে এসে পৌছায়। গ্রামের বাড়িতে তাদের আসার খবর মানুষের মাঝে জানা জানি হলে আশপাশের শত শত উৎসুক জনতা তাদের এক নজর দেখতে বাড়িতে ভীর করতে থাকে। বিকেলে গ্রামের বাড়িতে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি এসে পৌছালে রাবেয়া-রোকাইয়াকে ফুল আর ভালবাসায় বরণ করেন, তাদের বৃদ্ধ দাদা আলহাজ¦ মহির উদ্দিন মন্ডল ও দাদী নোমেছা খাতুন।
১৪ মার্চ রবিবার দুপুরে রাবেয়া-রোকাইয়ার বাড়ি ফিরে যাওয়া উপলক্ষে ঢাকার সিএমএইচ-এ ‘মুজিব শতবর্ষে শুভ গৃহ প্রত্যাবর্তন’ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ২০১৯ সালের ০১-০৩ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার খুলি ও ব্রেন সফলভাবে আলাদা করা হয়। এ ধরনের অপারেশন সারা বিশে^ই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন পরবর্তী সাফল্যও বিশে^ খুব বেশি নয়।
মূল অপারেশনের পরে বিভিন্ন ধাপে শিশু দু’টির আরও বেশ কয়েকটি অপারেশন সম্পন্ন হয়। সবশেষ ২০২০ এর ২৮ অক্টোবর তাদের ৪র্থ ধাপের অপারেশন হয়। জন্মগত কিছু ত্রæটি ছাড়া শিশু দুটি বর্তমানে প্রায় সুস্থ আছে।
শিশু রাবেয়া-রোকাইয়াকে দেখতে আসা প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ আমাদের গ্রামে ঈদের খুশি বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা এই শিশু দুটির বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষায় ছিলাম। অনেক দিনের প্রতিক্ষার পরে গতকালই যখন জানতে পেরেছি রাবেয়া-রোকাইয়া গ্রামে ফিরছে তখন থেকেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করি। অবশেষে আজ দীর্ঘ দিন পরে তাদের বাড়িতে আলাদা ভাবে দেখতে পেয়ে ভীষন ভাল লাগছে।
রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথমত আমি আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া জানাই এরপরে আমার মেয়ে দুটিকে আলাদা করনে যার সার্বিক সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছি তিনি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। এর বাইরে আমার গ্রামের মানুষ সহ পুরো দেশ বাসীর যে আকুন্ঠ ভালবাসা ও দোয়া পেয়েছি সেটা আমি কোনদিন ভুলবো না। সবশেষে আমি আবারও সবার কাছে মেয়ে দুটোর জন্য দোয়া কামনা করছি।
উল্লেখ্য-২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে জমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকেই মেয়ে দুটিকে নিয়ে মহা দুঃশ্চিন্তায় পরে যান এই শিক্ষক দম্পতি। এরপরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হতে থাকে জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়ার জীবন চিত্র ও বাবা মায়ের শংকা আর সংশয়ের নানা কথা। অবশেষে বিষয়টি দৃষ্টি গোচর হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং তিনি চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহন করেন।