অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক স্কুলের সব শিক্ষকরা ইলেকট্রিক পেমেন্ট ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন পাবেন। সেজন্য সব শিক্ষককে ‘আইবাস++’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য এন্ট্রি করতে বলা হয়। কিন্তু কর্মরত শিক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চাকরির অন্যান্য কাগজ, বয়স ও নামের মিল না থাকা, বিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ শিক্ষকের নাম না থাকায় ৮১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষক কবে থেকে বেতন পাবে তাও অনিশ্চিত।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
৮১ হাজারের বাইরে আরও ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষকের কোন তথ্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবে।
১৬ মার্চ অর্থ বিভাগের প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অ্যান্ড কো-অর্ডিরেটর (এসপিএফএমপি) সমন্বয়কারী (যুগ্ম সচিব) বিলকিস জাহান রিমি এসব প্রাথমিক শিক্ষক দ্রুত তালিকাভুক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়ন্ত্রক হিসাবরক্ষক (সিজিএ) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও পাবলিক ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (এসপিএফএমপি) তথ্যমতে, ৬৫ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুলে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৬ জন শিক্ষক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষক ৭ মার্চ পর্যন্ত ইএফটিতে কোন তথ্য প্রদান করেননি। এসব শিক্ষকদের জন্ম সনদ, বয়স, নাম, স্কুলের সঙ্গে শিক্ষকের নাম এসব তথ্য ভুল রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই এসব ভুল সংশোধনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিদপ্তরে আবেদন করেছে। সেজন্য তারা ইএফটিতে আবেদন করতে পারেনি।
বাকি ৩ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষকের মধ্যে আইবাস ডাটাবেজে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৭ জন শিক্ষক তথ্য এন্ট্রি হয়েছে, যার মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের তথ্য এন্ট্রি সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস অনুমোদন করেছে। তথ্য এন্ট্রি করেও থানা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষক। বাকি ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষকের তথ্য এখনও এন্ট্রি হয়নি বলে জানা গেছে।
এসপিএফএমপি তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট ২ লাখ ১৬ হাজার ১৫২ জন শিক্ষকের বেতন ইএফটিতে দেয়া হয়েছে এবং ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষকের বেতন ভাতা ইএফটিতে দেয়ার আদেশ অপেক্ষমাণ রয়েছে।
এদিকে ৩ হাজার ১১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন গেজেট, প্রজ্ঞাপন কিংবা বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবে বলে এসপিএফএমপি জানিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সময়ের এসব শিক্ষকদের তথ্য সংশোধন করে তথ্য এন্ট্রি করে এসপিএফএমপিকে জানাতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ডাটাবেজে তথ্য এন্ট্রির অপেক্ষমাণ ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন তথ্য দ্রুত অনুমোদন, ৮ হাজার ৪২২ জনের আসল তথ্য, ৬৯ হাজার ৯৯২ জন যারা ইএফটির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে তাদের তথ্য দ্রুত দিতে বলা হয়েছে। যেসব স্কুলের গেজেট, প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি নেই সেসব স্কুলের তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ স্বীকার করে বলেন, ইএফটিতে তথ্য এন্ট্রি করতে গিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা পড়েছেন শিক্ষকরা। সে কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে অনেকেই বেতন পায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রে সঙ্গে চাকরি যোগদানের তারিখ মিল না থাকায় এ জটিলতা বেশি হয়েছে। এটা কবে সমাধান হবে তাও অনিশ্চিত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) খালেদ আহমেদ জানান, যেহেতু অপ্রাসঙ্গিকভাবে কার্যক্রমটি শুরু হয়েছে তাই কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। অধিকাংশেরই ভুল সংশোধন করে এন্ট্রি দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এ জটিলতা কেটে যাবে। শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার এ বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক আছেন যাদের ইএফটিতে তথ্যগত ঝামেলায় বেতন সমস্যা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু শিক্ষকের সমস্যা সমাধানও হয়েছে। বাকিদেরও খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।