রাজধানীর ঝাউচর এলাকায় অটোরিকশা চালান মো. রসুল আহমেদ। করোনার কারণে বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন, তাই রিকশার চাকা ঘোরেনি। এ কারণে সংসারেও পড়েছে টান। এরইমধ্যে ছেলের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য টাকা চেয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টাকার পরিমাণ সরকার নির্ধারিত নয় বরং সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ৫ গুণ বেশি।
জানা যায়, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে জনপ্রতি ফি ধরা হয়েছে ৭-১২ হাজার টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র এক হাজার ৮৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৯৭০ টাকা।
করোনার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অবস্থা নাজুক। এরমধ্যেই রাজধানীসহ সারাদেশে পরীক্ষার ফি নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
মো. রসুল আহমেদের ছেলে নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আব্বার এখন শরীর চলেনা। এত টাকা দিয়ে আমার ফরম পূরণ করা হবে না। হয়তো এখানেই আমার লেখাপড়া শেষ!’
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর ঢাকা উদ্যান এলাকায় ১০-১২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে শিক্ষার্থীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা৷ অথচ ঢাকা বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী এখনো ফরম পূরণের সময় শুরু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা উদ্যান ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, তুরাগ ন্যাশনাল হাইস্কুল ও ম্যানচেস্টার হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ৭-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে ১ এপ্রিল থেকে এই কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ইতিমধ্যে টাকা আদায় শুরু করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও করোনায় সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও এখানে প্রকাশ্যে ক্লাস ও কোচিং চলছে। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মাসিক বেতন।
শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা উদ্যান এলাকার প্রেসিডেন্সি হাইস্কুল ও ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাইস্কুলের সরকারি অনুমোদন আছে। তবে ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদানের অনুমোদন নেই। বাকি বিদ্যালয়গুলো মোটের ওপর অনুমোদন-হীন।
তিনি আরও জানান, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা মান্য করে না। পরীক্ষার ফি ও মাসিক ফিসহ অন্যান্য ফি আদায় করা হয় ইচ্ছামাফিক। একমাত্র প্রেসিডেন্সি হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদানের অনুমোদন থাকায় অন্য বিদ্যালয়গুলো প্রেসিডেন্সি হাইস্কুলের নিবন্ধনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনা। স্কুলের সে অনুমোদন নেই। যে কারণে অন্য স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করে থাকি। এই কারণেই শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্কুলে তো শিক্ষার্থী কম। যেসব স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী তারাও অনেক বেশি টাকা শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করছে।’
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা উদ্যানের দুটি স্কুল ছাড়া সবগুলোই অনুমোদন-হীন। ফলে তারা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ’
অতিরিক্ত ফি আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রথম শুনলাম। কালই (আজ রোববার) পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব। ’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, ‘বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি এবং সব বিদ্যালয়কে জানিয়েছি। তারপরও যদি কেউ অতিরিক্ত অর্থ নেয় তাহলে অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষাও হবে না। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ফরম পূরণ করতে পারবে। কেউ এ বিষয়ে বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’