টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
গ্রাম পর্যন্ত আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

গ্রাম পর্যন্ত আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রায়ও লাগছে আধুনিকতার ছোয়া। অতীতে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই রান্নার কাজে মাটির হাড়ি পাতিল ব্যবহার করতেন। মাটির তৈরী কলসী, দইয়ের খুটি, কড়াই, সরা, ব্যাংক, ঝাঁঝুড়, চাড়ি, খাদা, তবাক, কোলা, রসের হাড়ি, কুপের পাটসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনে মাটির তৈরী তৈজসপত্র ব্যবহার করতেন তারা। কিন্তু বর্তমান সময়ে মাটির তৈরী এসব তৈজসপত্রের চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন সংসারের নিত্য প্রয়োজনে চকচকে সিলভারের হাড়ি পাতিল, মেলামাইন ও প্লাষ্টিকের বাসন ব্যবহার করছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহের বিস্তৃতি বাড়ায় গ্রামের অনেক মানুষ এখন বিদ্যুৎ চালিত রাইসকুকার, রুটি মেকারও ব্যবহার করছেন। এসবের ফলশ্রæতিতে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি আঠালো মাটির অভাব, বিভিন্ন রকমের জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির ফলে এ শিল্পের সাথে যুক্ত থাকা পাল সম্প্রদায়ের মানুষ গুলো দিশেহারা হয়ে পরেছেন। অনেকে ইতিমধ্যে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিছু মানুষ এখনও এ পেশায় নিয়োজিত থেকে অতি কষ্টে সংসার পরিচালনা করে আসছেন।

অতীতে চাটমোহরের হরিপুর, মির্জাপুর, বেলগাছি, গৌড়িপুর, মুলগ্রাম, পৌরসদররের নতুনবাজার, বালুচরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পাল পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। এখনও এসব এলাকার প্রায় নব্বইটি পরিবার এ পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন। তারা রুটি রুজি জীবন ধারণ সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছেন এ পেশাকে আশ্রয় করে। হরিপুর বাজার পাড়ার অশোক কুমার পাল জানান,“আমরা পাঁচ ভাই মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত আছি। আমাদের সাথে বাড়ির বৌঝিরাও কাদা মাটি দিয়ে দইয়ের খুটি, কাড়াই, সরা, পাখির হাড়ি, রসের হাড়ি, কুপের পাট তৈরী করে। এক সময় মাটি কিনতে হতো না কিন্তু এখন ৬শ টাকা ট্রলি মাটি কিনতে হয় আমাদের। , প্রতি বস্তা কাঠের গুড়ার দাম ১৫০ টাকায় পৌছেছে। গোবর থেকে তৈরী জ্বালানী ও ধানের খড়ের দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লেও আমাদের তৈরী জিনিষপত্রের চাহিদা কমছে। এখন এ পাড়ার রবি পাল, চিত্ত পাল, সুপদ পাল, মনোরঞ্জন পাল, পরিতোষ পাল, বরুন পালসহ ১৩ পাল পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত আছেন। আগে এ পাড়ায় প্রায় ৪০টি পাল পরিবার বসবাস করতো। এর মধ্যে কেউ কেউ ভারতে পারি জমিয়েছেন আবার কেউবা এ কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।
বরুন পাল জানান, “আমরা ব্যবসায়িক পরিবর্তন এনেছি। মাটির তৈজস পত্রের বদলে আমরা এখন বাড়ির পায়খানার কূপে ব্যবহারের রিং তৈরী করছি। প্রতিটি ৩২ ইঞ্চি ব্যাসের রিং ১৮০ টাকায়, ২৯ ইঞ্চি ব্যাসের রিং ১৩০ টাকায়, ২৬ ইঞ্চি ব্যাসের রিং ১০০ টাকায়, ২৩ ইঞ্চি ব্যাসের রিং ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। একবারে ৪শ টি কাঁচা রিং পোড়ানো যায়। মাটির তৈরি করা কাঁচা রিং শক্ত করতে ৩ দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর ভাটায় সাজিয়ে চার পাশে কাদা মাটির প্রলেপ দিয়ে একটানা প্রায় ১৫ ঘন্টা তাপ দিতে হয়। পোড়ানোর পর গরম রিং গুলো ঠান্ডা করার জন্য ১ দিন রেখে দেই। আমার অধীনে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।”

রঞ্জিত পাল জানান, এখন গৌড়পুরে ৩০ পরিবার, বেলগাছিতে ২৫ পরিবার, মূলগ্রামে ১০ পরিবার, পৌর সদরে ৩/৪ পরিবার সব মিলিয়ে চাটমোহরে ৮০ থেকে ৯০ পাল পরিবার মৃৎশিল্পের কাজ করেন। তিনি আরো জানান, আমাদের ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital