টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
রেইনকোট: বর্ষণমুখর দিনে বেদনায় মোড়ানো স্মৃতি

রেইনকোট: বর্ষণমুখর দিনে বেদনায় মোড়ানো স্মৃতি

বাঙালি সিনেমার পরিচালকদের মধ্যে এক অনন্য নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। রেইনকোট একটি হিন্দি চলচ্চিত্র। ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মিত একমাত্র হিন্দি সিনেমা। তার নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তিনি বজায় রেখেছেন মৌলিকত্ব ও স্বাতন্ত্র্য। এ সিনেমার কাহিনি খুবই ছোট, কিন্তু এর গল্পের অভিনবত্ব, আবেগ আর অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ এবং পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে থাকা বর্ষণমুখর দিনে বেদনায় মোড়ানো স্মৃতি একে অন্য মাত্রা প্রদান করেছে। কালজয়ী আমেরিকান ছোটগল্পকার ও হেনরীর বিখ্যাত গল্প ‘দ্য গিফট অব ম্যাজাই’র ছায়া এ চলচ্চিত্রে রয়েছে। মূল গল্পের জিম ও ডেলার ত্যাগী মনোভাবের সাথে এ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটির মনোভাবের মিল ব্যতীত এর চিত্রনাট্যের মৌলিকত্ব ও অভিনবত্ব অনন্য।

বেকার মনোজ (অজয় দেবগন) কলকাতায় আসে তার পুরনো বন্ধুদের কাছে ব্যবসা করার জন্য সাহায্য চাইতে। মনোজ তার পুরনো প্রেমিকা নীরজার (ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন) সাথে এক বৃষ্টিভেজা দিনে দেখা করতে যায়। প্রেমের বেদনাদায়ক গল্পগুলো ঠিক যেমন হয়, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। নীরজার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মনোজের চেয়ে বিত্তবান পরিবার পাওয়ায় দূর শহর কলকাতায়। মনোজ কোনোভাবে ঠেকাতে পারেনি সেই বিয়ে। কিন্তু প্রেম কি এত সহজে মরে যায়? বহু বছর পরেও তার শুধু একবার দেখা করবার সাধ জাগে। স্মৃতিময়তার দেয়ালে আঘাত লাগে তাদের অবশেষে দেখা হলেই। মুহূর্তেই দুজন দুজনের কাছে সেই পুরনো মান্নু এবং নীরু হয়ে ওঠে।

এই চলচ্চিত্রের গল্পটি বলেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তার নিজস্ব স্টাইলে। বাদল দিনে গল্প করতে করতে ফ্লাশব্যাকে নায়ক মনোজের মাথায় বারবার তাদের পুরনো স্মৃতিগুলো ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে ভাগলপুর নামের দূর মফস্বলে তাদের পুরনো প্রেম এবং তার করুণ পরিসমাপ্তির গল্প। বর্তমানে অনবরত মিথ্যা বলে সেই করুণ অবস্থা ঢেকে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টাও দুজনের করুণ অবস্থা সমান্তরালে উন্মোচিত হয়েছে। মনোজ নিজেকে ধনী এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সুখী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা। অন্যদিকে ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে মনে হলেও দেখা যায় নীরজার বিয়ে হয়েছে এক ভণ্ড এবং মাতাল ঋণগ্রস্ত লোকের সাথে। দুই দিক থেকে দুজনই আর্থিক অনটন এবং মানসিক অশান্তির সাথে লড়াই করছে। তবে দুজনই তা প্রকাশ না করে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মিথ্যা গল্প বলেই যাচ্ছে।

তবে গল্পে মোড় নেয় অন্যদিকে, বাড়ির মালিক ভাড়া চাইতে আসে নীরুর অনুপস্থিতিতে তখনি মনোজের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায় নীরুর করুণ অবস্থা, সংসারের অভাব ও দারিদ্র্য। দুজনের সব গোপন কথা সত্যের আপন নিয়মে উন্মোচিত হয় নিজেদের অজান্তে। সব মিথ্যার আড়ালে বিষাদময় জীবনের যে হাহাকার তা দর্শক হৃদয়েও করুণরসের সৃষ্টি করে। চলচ্চিত্রটির সাথে এক অন্যরকম একাত্মতা অনুভূত হয়।

মনোজ অথবা নীরু- কারো প্রায়শ্চিত্ত, আক্ষেপ বা প্রতিশোধ নয়, বরং এখানে জয় হয়েছে প্রেমের। মোমবাতির আলোর মতো কোমল প্রেম, যাতে আশা আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা নেই বটে, কিন্তু তাকে উপেক্ষা করারও সুযোগ নেই।

হালকা এক বিষাদে সবাইকে আচ্ছন্ন করে এ চলচ্চিত্রের সমাপ্তি ঘটে। বৃষ্টির দিনে বন্ধুপত্নীর দেওয়া একটি রেইনকোট এ চলচ্চিত্রের গল্পের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হওয়ায় চলচ্চিত্রটির নাম রেইনকোট।

প্রত্যেকটা মানুষের স্বাভাবিক জীবনের আড়ালে একান্ত নিজস্ব এক জগৎ থাকে। জীবনের কিছু গল্প কখনো হয়তো কাউকে বলা যায় না। এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো অসাধারণ ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। মনোজ যখন তার বন্ধুপত্নীকে জিজ্ঞাসা করে, বিয়ের পর বাপের বাড়ি থেকে আসার সময় মেয়েরা এত কাঁদে কেন? এটা কি শুধু প্রিয়জনদের ছেড়ে আসার কষ্ট, না কি অন্যকিছু? বন্ধুপত্নী এর উত্তর এড়িয়ে যেয়ে বলে, বাথরুমে কান্নার সময় শাওয়ার অন করে নিলে কান্নার শব্দ বাইরে আসে না। কিছু ব্যাপার আপনারও মেয়েদের কাছ থেকে শেখার আছে। এরপর দুজনের মাঝে নীরবতা নেমে আসে। আর কোনো কথা হয় না। এই সূক্ষ্ম প্রকাশভঙ্গিগুলো দর্শকের নিজস্ব জগতে এক আলোড়নের সৃষ্টি করে।

দুজন দুজনের সুখে থাকার এবং বিত্তবৈভবের গল্প বলতে গিয়ে অনবরত মিথ্যা কথা বলেছে। কিন্তু সে মিথ্যা কোনোভাবেই রূঢ়ভাবে কানে লাগে না। বরং মিথ্যার সাথে লেগে থাকা গভীর বিষাদ দর্শকের হৃদয়ে হাহাকার জাগিয়ে তোলে। একইসাথে এই মিথ্যা বলাকেই সমীচীন মনে হয় এবং এর প্রতি এক প্রচ্ছন্ন সমর্থন দর্শক হৃদয়ে জেগে ওঠে। ঐশ্বরিয়া রাই এবং অজয় দেবগন- দুজনেই একেবারে চরিত্রের সাথে মিশে গিয়ে অনবদ্য অভিনয় করেছেন।

এ সিনেমাটিতে কোনো আধিক্য নেই। শুধু ছয়জন শিল্পীর অভিনয়েই পরিচালক এত শক্তিশালী একটি গল্প বলতে পেরেছেন। মাত্র ১৬ দিনে এ চলচ্চিত্রটির শ্যুটিং শেষ হয়েছিল। এ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানগুলো একে অন্য মাত্রা প্রদান করেছে। কাহিনীর সাথে মিশে থাকা বিষাদময় এ গানগুলো রচনা করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং প্রখ্যাত ভারতীয় গীতিকার গুলজার। রাধা কৃষ্ণের চিরকালীন বিরহগাঁথাকে ধারণ করে রচিত গানগুলো চলচ্চিত্রের সাথে নিবিড়ভাবে মিশে গেছে। চলচ্চিত্রের আবহ সংগীতও এর বিষাদময় আবহ সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রেমের কাব্যিক কোমল ছোঁয়া রেখে যাবে সব দর্শকের হৃদয়ে। সূত্র- রোয়ার বাংলা

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital