নিহত কবির হাসান রংপুরের মিঠাপুকুর থানার কাঠালি নয়াপাড়া গ্রামের জাবিউল ইসলাম ওরফে খলিলের ছেলে। প্রতারক নাজমুল ইসলাম গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার কুতুবাস গ্রামের ফজর আলীর ছেলে। কবির হাসানদের এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি এবং সেখানেই বসবাস করেন নাজমুল।
র্যাব জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেতর থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে কবিরের লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করে র্যাব। সেখান থেকে তারা জানতে পেরেছে কবির হাসান রংপুরের মিঠাপুকুর থানার নয়াপাড়া গ্রামের জাবিউল ইসলামের ছেলে।
কবির হাসানের বড় ভাই কামরুল ইসলাম জানান, এলাকায় তার বাবার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। কবির স্থানীয় একটি কলেজের অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) প্রথম বর্ষের ছাত্র। সম্প্রতি করোনা মহামারীর কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানেও সময় দিতো কবির। এমতাবস্থায় সংসাসের অভাব অনটনের কথা চিন্তা করে কবির হাসান একটি চাকরিও খুঁজতে থাকে।
র্যাবের হাতে আটক তিনজন
তিনি আরও জানান, তাদের এলাকায় যাওয়া-আসা থাকায় নাজমুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় কবিরের। পরে কবিরের বাবাকে সাড়ে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে গাড়ি চালকের চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয় নাজমুল। পরিবারে স্বাচ্ছলতার আশায় তার বাবা ৩৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন এবং বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার করে গত ডিসেম্বর নাজমুলের হাতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা তুলে দেন। পরে ওই টাকা বুঝে পেয়ে কবিরকে একটি নিয়োগপত্র দেয় নাজমুল এবং তাকে যোগদানের জন্য বলা হয়।
কবিরের দুলাভাই স্বাধীন মিয়া জানান, চাকরিতে যোগদানের জন্য সবার কাছ থেকে দোয়া ও বিদায় নিয়ে কবির গত ২৫ মার্চ নাজমুলের সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। ২৯ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে সবশেষ বাবার সঙ্গে কথা হয় কবির হাসানের। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায় এবং আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
স্বাধীন মিয়া আরও জানান, এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরিবারের লোকজন নাজমুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায়, ‘কবির চাকরিতে ইতিমধ্যেই যোগদান করেছে, তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তার সাথে কথা বলা যাবে না।’ এভাবেই কেটে যায় আরো কয়েকদিন। পরে ১ এপ্রিল কবিরের পরিবার মৃত্যুর সংবাদ পায়। তখন নাজমুলকে ফোন করলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ও র্যাবের ফোন পেয়ে এবং কবিরের ছবি ও তার পরনের জামা-কাপড় দেখে নিহত কবিরের লাশ শনাক্ত করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নাজমুল ছাড়াও অন্য কেউ সঙ্গে রয়েছে কি-না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।
নাজমুল একজন খারাপ প্রকৃতির লোক বলে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে। তারপরও তার কি বুঝে তাকে টাকা দিয়েছেন স্বাধীন মিয়ার শ্বশুর এটি তার কাছে বোধগম্য নয় বলে জানান।
অপরদিকে শুক্রবার রাতে র্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানীর কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশটি উদ্ধারের পরদিন ৩১ মার্চ শ্রীপুর থানায় মামলা হয়। পরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আভিযানিক দল ডিএমপির পল্লবী বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।
১ মার্চ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার গালিমপুর এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে মাসুদুর রহমান (৩৭), একই জেলা ও থানার জালালপুর এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. আব্দুল হালিম (৩৬) এবং যশোরের চৌগাছা থানা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. লাল্টু মিয়াকে (৪১) আটক করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা কবির হাসানকে হত্যা করা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের এক যুবককেও হত্যার কথা স্বীকার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, ২টি গামছা, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি ডেক্সটপ, নগদ ১১ হাজার ২৩০ টাকা, বিভিন্ন ধরণের ভিজিটিং কার্ড, ১৫টি বায়োডাটা, ফাঁকা স্ট্যাম্প ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিল এবং অফিস আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।