মুসআব ইবনে সাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ধারণা করেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যান্য সাহাবির ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মতকে তাদের দুর্বলদের কারণে সাহায্য করেন: তাদের দোয়া, তাদের নামাজ ও তাদের ইখলাস বা নিষ্ঠার কারণে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৭৮)।
উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দুর্দিনে ও অসহায় অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য লাভের তিনটি উপায় বর্ণনা করেছেন। তা হলো- দোয়া, নামাজ ও আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়া।
এ ছাড়া হাদিসে আল্লাহর দরবারে দুর্বল ও অসহায় মানুষের বিশেষ মর্যাদার প্রমাণও রয়েছে।
দুর্বল দ্বারা উদ্দেশ্য: সমাজের এমন ব্যক্তি যারা দারিদ্র্য, শারীরিক অক্ষমতা, বার্ধক্যসহ নানা কারণে পিছিয়ে রয়েছে। তবে তারা আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত ও স্মরণে পিছিয়ে থাকে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি নিজেকে ধৈর্যসহ রাখবেন তাদের সঙ্গে, যারা সকাল ও সন্ধ্যা আহ্বান করে তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে এবং আপনি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখবেন না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ২৮)
দুর্বলরা সমাজের বোঝা নয়: সমাজের অসহায়, দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাধারণত বোঝা মনে করা হয়। কিন্তু ইসলাম এ দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অসহায় ও দুর্বলরা সমাজের জন্য আশীর্বাদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের দুর্বলদের জন্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হও এবং জীবিকা লাভ করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬) সাহায্য লাভের তিন আমল
আলোচ্য হাদিসে অসহায়ত্ব ও দুর্দিনে আল্লাহর সাহায্য লাভের তিনটি আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। একাধিক আয়াত ও হাদিসে আমল তিনটির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
১. দোয়া: আল্লাহর কাছে দোয়া বা প্রার্থনা মুমিনের হাতিয়ার। দুর্দিনে আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তিনিই আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ দূর করেন।…’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ভাগ্য পরিবর্তন হয় শুধু দোয়ার মাধ্যমে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায় শুধু ভালো কাজের মাধ্যমে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৮৯)
২. নামাজ: নামাজ আল্লাহর সাহায্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। এটা বিনীত ছাড়া অন্যদের জন্য অবশ্যই কঠিন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৫)।
হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩১৯)
৩. নিষ্ঠা: ইখলাস বা নিষ্ঠার মাধ্যমে বান্দার আমলের মূল্য বেড়ে যায় এবং আল্লাহর সাহায্য ত্বরান্বিত হয়। বিপরীতে যারা লোকদেখানোর জন্য কাজ করে তারা আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়।
পবিত্র কোরআনে এমন এক সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তাদের মতো হবে না যারা দম্ভভরে ও লোক দেখানোর জন্য নিজ ঘর থেকে বের হয়েছিল এবং লোকদের আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। তারা যা করে আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৭)