ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তার পেছনে কোভিড-১৯-এর নতুন ধরন ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ কাজ করছে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে ভারত ইতোমধ্যে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশে পরিণত হয়েছে। একারণে ভারতের সঙ্গে আজ সোমবার থেকে স্থলপথে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ ঘোষণা ১৪ দিনের জন্য বলবৎ থাকবে। এর আগে থেকেই দেশটির সঙ্গে আকাশপথে চলাচল বন্ধ হয়েছে। ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বড় ধরনের অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে। এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল থেকেই ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যাত্রী চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তাই আমরা চাইছি, স্থলবন্দর ও সীমান্ত থেকে মানুষের যাতায়াত দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখার। এই সময়ে মানুষের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলবে। ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ১৪ দিন মানুষের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলবে।
ভারতে গত ৩ দিনে প্রায় ১০ লাখ মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ জনের। এই সময়ে এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬২৪ জন। ভারতের রাজধানী দিল্লির হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মার্চের শেষে এসে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।
রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এখনি তো ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। তবে ভারতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত কড়াকড়িভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য এই কড়াকড়ি থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আজ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে একদল বিশ্লেষক বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্যউপাত্ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পদক্ষেপ, ভাইরাসের বিস্তারের ধরন- এমন নানা কিছু বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকদের দলটি যে সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছে তাতে একথা বলা হয়। বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সাথে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষক দলটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল।
তিনি বলছেন, ভারতে এর ব্যাপকভাবে বিস্তার হচ্ছে এবং সেখানে ভাইরাসের ডাবল ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। ভারতে শনাক্ত করোনাভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন এখন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। তবে এটা এখনও জানা যায়নি যে কোভিডের এই ভ্যারিয়েন্টটি আসলে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে এবং ভারতে এখন সংক্রমণের যে ভয়াবহ ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে তার জন্য নতুন শনাক্ত এই করোনাভাইরাসটি কতটা দায়ী। ভারতে গত কয়েক দিনে মহামারি পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ায় এবং সেখানে শনাক্ত করোনা নতুন স্ট্রেইন প্রবেশ ও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধের অনুরোধ ছিল বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা।