সোমবার (২৬এপ্রিল) বেলা পৌণে একটায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কৃষক বেশে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এই ধান কাটা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ প্রকল্পের ধান কাটা উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় আদিবাসী কৃষাণ-কৃষাণীরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে শস্যচিত্রে জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং বেসরকারি কোম্পানি ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় এই ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামে বিশাল আয়তনের এই প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়। এটি গত ১৬ মার্চ বিশে^র সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির নতুন ইতিহাস তৈরী হয়েছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু ধান কাটা উৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতকে নভেল করোনার সঙ্গে আখ্যায়িত করে বলেন, মহামারী নভেল করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। তেমনিভাবে সাম্প্রদায়িক ওই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে রুখতে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে বাংলার মাটিতে স্থান দেওয়া হবে না। আগামি প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করতে নানামমুখি কর্মসূচি গ্রহণের আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কৃষি ও কৃষকের বন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ বির্নিমানে কাজ করে গেছেন। তাই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ফসলি মাঠে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই ২৬মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কলুষিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে তাদের সেসব চেষ্টা ব্যর্থ হলেও মসজিদ ও মাদ্রাসাকে কলুষিত করেছে। হেফাজতে ইসলাম নামের ওই মৌলবাদী গোষ্ঠি এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। জামায়াত-হেফাজতকে ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর ষড়যন্তে লিপ্ত রয়েছে বিএনপি-এমন অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, কু-চক্রী এই মহলটির সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় বিএনপির মহাসচিব ফখরুর ইসলাম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই পাগলের প্রলাপ বকছেন। কিন্তু বাংলার মানুষ তার মিথ্যাচারে কান দেয় না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গ্রহ, সহ-সভাপতি ম. আব্দুল রাজ্জাক, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদে সদস্য সচিব কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া অন্যদের বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
আয়োজকরা জানান, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নির্ভৃত পল্লী বালেন্দা গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠের একশ’ বিঘা জমির গাঢ় বেগুণী ও সবুজ ক্যানভাসে ফুটে তোলা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। যার নাম দেওয়া হয় ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে গত ২৯ জানুয়ারি উচ্চ ফলনশীল দুই ধরণের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এই চিত্রকর্মটির শুভ সূচনা করা হয়। পরবর্তীতে বিশে^র সবচেয়ে বড় ‘শস্যচিত্র’ হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত বিশ^ রেকর্ড গড়ে। গিনেজ ওয়াল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। এই প্রকল্পের ১শ বিঘা জমির এই ধান কাটার পর সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়া হবে। তবে এর কিছু অংশ স্থানীয় কৃষক এবং এই প্রকল্প কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদেরও দেওয়া হবে বলে জানান তারা।
প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শস্যচিত্রে প্রতিকৃতির আয়তন ১২লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪শ’ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩শ’ মিটার। বিশে^র সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র এটি। কারণ সর্বশেষ বিগত ২০১৯সালে চিনে তৈরী শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল ৮লাখ ৫৫হাজার ৭৮৬বর্গফুট। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য দুই ধরনের ধান বেছে নেওয়া হয় গাঢ় বেগুণী ও সোনালী রং। চিন থেকে এই ধানের জাতটি আমদানি করা হয়েছে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই নিভৃত পল্লীর বালেন্দা গ্রামের ফসলি মাঠে একশত বিঘা জমি লীজ নেওয়া হয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরী করা হয়। পরে চারা লাগানোর জন্য নির্ধারিত মাঠ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজে একশ’ বিএনসিসি সদস্যের দল অংশ নেন। চারা রোপন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুরোদমে চলে চারা রোপনের কাজ। প্রতিদিন একশত বিশ থেকে একশত ত্রিশজন নারী-পুরুষ শ্রমিক এই চারা রোপণ কাজ করেছেন।