করতোয়া নদীর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বগুড়া জেলার শেরপুর অংশে। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা প্রমত্তা করতোয়া নদী এখন মৃত প্রায়। উজান থেকে পানির প্রবাহ নেই। তাই দখল আর আবর্জনার দূষণে এ নদী জর্জরিত। এক কালের প্রমত্তা করতোয়া নদী আজ দখল, শহরের হাট-বাজার, বাসা-বাড়ির বর্জ্য, খনন বা সংস্কার না হওয়া ও দূষণে পচা নর্দমার ড্রেন বা ক্যানেলে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ি ঘাট, পৌরসভা কার্যালয়ের পূর্বপাশ, বারোদুয়ারী হাট, রনবীরবালা ঘাটপার ও শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্নসহ বিভিন্ন এলাকায় করতোয়া নদীর তীরবর্তী ১৮টি স্পট দখল করে ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর, ময়লার ভাগার ফেলে দখল করে রেখেছে দখলবাজরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ অহরহ।
একদিকে দীর্ঘদিন খনন না হওয়া ও অন্যদিকে দখল চলতে থাকায় শেরপুরের মানচিত্র থেকে প্রমত্তা ‘করতোয়া নদী’ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বচন রয়েছে, ‘কর’ অর্থ হাত, আর তোয়া অর্থ ধোঁয়া জল, অর্থ্যাৎ হাত ধোয়া জল, হিন্দু ধর্মীয় দেবতা হিমালয়ে ধ্যানমগ্ন শিবের হাত ধোঁয়া জল থেকেই করতোয়া নদীর উৎপত্তি। তাছাড়া বিশিষ্ঠ ইতিহাসবিদ প্রভাত চন্দ্র সেন ‘বগুড়ার ইতিহাস’ গ্রন্থেও ভারতের হিমালয় পাদদেশ থেকে করতোয়া নদীর উৎপত্তির উল্লেখ রয়েছে। ভারতে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে এ নদী প্রবেশ করে। সেখান থেকে করতোয়া বগুড়ার শহরের বুক চিরে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে হুরা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
মোট ৫৯৭ কিলোমিটার বা ৩৭৩ মাইল দৈর্ঘ্যের করতোয়া নদীতে আশির দশকে প্রচুর পানি থাকায় প্রমত্তা ছিল। “জনশ্রুতি আছে করতোয়া নদীতে সওদাগরী জাহাজ, লঞ্চ এবং বড় বড় নৌকা বজরা যেটা বলে সেটা যাতায়াত করতো। পণ্য পরিবহন হতো এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল পুর্ন্ড্রবর্ধন নগরী বগুড়া এবং করতোয়া নদীকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন র্বোর্ড ১৯৮৮ সালে উজানে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খুলশিতে বাধ ও স্যুইচ গেইট নির্মাণ করে । সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের অপরিনাম দর্শিতার কারনে করতোয়ার পানি প্রবাহের গতিপথ সম্পূর্ণ বন্ধ ও ভরাট হয়ে গেছে। সে থেকেই প্রভাবশালীরা ধীরে ধীরে দখল -দূষণ নানা প্রাকৃতিক কারনে বন্যা জনিত ক্ষয়-ক্ষতি ও নদী সংস্কারের অভাবে করতোয়া পূর্বের সকল বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে দ্রæত নগরায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানুষের অপরিনামদর্শী কর্মকান্ড প্রভাব ফেলেছে করতোয়া নদীর উপর।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশবিদরা জানান, করতোয়াকে বাঁচাতে হলে ব্যাপক পরিবেশগত সচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগে নদীর দুইধার অবকাঠামো মুক্ত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ নদী মার্তৃক দেশ। নদী রক্ষায় সরকার বদ্ধ পরিকর। খুব দ্রুত নদীর খনন কাজ শুরু হবে। এছাড়াও যারা নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে তা দ্রæত অপসারণ করে করতোয়া নদীকে আগের রুপে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।