খালের উপর কোন রকমের ৩ টি সরু পাইপ বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খালটি দখলে রেখেছেন তিনি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই এ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙ্গে সরকারি অর্থায়নে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে কালভার্ট। সরেজমিনে দেখা গেছে, মমতাজ চক্ষু হাসপাতালের সামনে খালের উপর একটি এ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য এ্যাপ্রোচ সড়কটির তলদেশে থাকা তিনটি সরু পাইপ সড়িয়ে প্রায় ১৫০ ফুট চওড়া খালটির দুইপাশে সরকারি জায়গার উপর এ্যাপ্রোচ সড়কের কিছু অংশ বিদ্যমান রেখেই মাঝখানে প্রায় ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৬ ফুট প্রস্থ একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে এ্যাপ্রোচ সড়কের উপর নির্মিত এই কালভার্টটির নির্মাণের দ্বায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কহিনুর এন্টার প্রাইজ এবং এর সার্বিক তদারকির দ্বায়িত্বে রয়েছে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।
বর্ষা মৌসুম শেষে আশপাশের কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল এটি। আর সেই খালটিতে কোন রকমের কয়েকটি পাইপ স্থাপনের ফলে ঠিকমত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এ্যাপ্রোচ সড়কটি অপসারণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ প্রেরণ করেন। এ্যাপ্রোচ সড়কটি অপসারণের জন্য নোটিশ প্রেরণের পর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা হয়।
পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সরকারি অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে ও সেচ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সেই খালের উপর কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। যার প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ লক্ষ টাকা।
এর আগে ২০০৪ সালে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার জয়রা রোডে একটি ভাড়া করা ভবনে মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন মানিকগঞ্জ-০১ আসনের সাংসদ মমতাজ বেগম। দীর্ঘদিন ভাড়া করা ভবনে হাসপাতালটি পরিচালনার পর ২০১৮ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজস্ব জমিতে হাসপাতালটি স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালটি নিজস্ব জমিতে স্থানান্তর করার পর সেখানে প্রবেশের মুখে একটি খাল রয়েছে। যার মালিকানায় রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সূত্রে জানা যায়, এমপি মমতাজের মালিকানাধীন মমতাজ চক্ষু হাসপতালটির লাইসেন্স সর্বশেষ নবায়ন করা হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়। যার রেজিঃ নম্বর- ঐঝগ-৪৫৯৪৭।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, মমতাজ চক্ষু হাসপাতালের সামনে খালের উপর এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুম শেষে আশপাশের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। আশপাশের কৃষিজমি একাধিক ফসল চাষাবাদের উপযোগী হলেও জলাবদ্ধতার কারণে এতদিন সেটা সম্ভব ছিলনা। তবে এ্যাপ্রোচ সড়কটি ভেঙ্গে নতুন করে কালভার্ট তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে মমতাজ চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজার মো. আক্কাস আলী বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত টাকা জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করা আছে। এখন সরকার যদি লাইসেন্স না দেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’ এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ্যাপ্রাচ সড়কটি নির্মাণ করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে ম্যাডামের সাথে কথা বলেন। এ ব্যাপারে ম্যাডাম ভালো বলতে পারবে।’
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি অর্থায়নে কালভার্ট নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে বিএডিসির এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. ফরহাদ হোসেন সৌরভ বলেন, এই কাজটি একটি মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। এখান দিয়ে যাতে ঠিকমত পানি নিষ্কাশন হতে পারে সেজন্য ডিসি স্যারের নির্দেশে কাজটি করা হচ্ছে। কৃষকদের সুবিধার্থেই এটি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গাউস-উল হাসান মারুফ বলেন, ওই খালটি সড়ক ও জনপথের জায়গা। খালটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। পরে হাসপাতালটির পাশে একটি সরকারি প্রকল্প চালু হয়েছে। সরকারি কাজের জন্য সরকারি জায়গা ব্যবহারের নিয়ম আছে। পরে ডিসি অফিসে মিটিংয়ের মাধ্যমে আলাচনা করেই ওখানে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালটি সরকারি প্রকল্পের পাশে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, কৃষি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ যেকোন জায়গায় কালভার্ট নির্মাণ করতে পারে। গজারিয়া চকের জলাবদ্ধতা নিরসন করতেই পানি নিষ্কাশন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সমস্ত আইন মেনেই এই কাজ করা হচ্ছে।
সরকারি খাল দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মমতাজ বেগম বলেন, হাসপাতালটি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয় না, এটা একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রথমে আমাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে পাইপ বসিয়ে এ্যাপ্রোচটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পানি নিষ্কাশনের জন্য সেটা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পরে সরকারিভাবে পুন:নির্মাণ করা হচ্ছে।
যেহেতু এটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই এটার জন্য সরকারিভাবে সুবিধা পাওয়া স্বাভাবিক বলেও জানান তিনি।