শনিবার দুপুরে পুলিশ তার স্বামীর বাড়ি নিজ ঘরের বিছানা থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। নিহত শরিফা বেগম (২০) নবীগঞ্জ উপজেলার পিটুয়া গ্রামের শাকিম উল্যার ছোট মেয়ে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে নিহতের স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগমকে আটক করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। যদিও থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত স্বামী ও শাশুড়ির দাবি; পরিবারের সবার অজান্তে শরিফা আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছে।
তবে নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকায় এ ব্যাপারে দুইজনকে আটক দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে সূত্র জানায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা, প্রায় ৯ মাস আগে উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর পুত্র আরশ আলীর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্যার ছোট মেয়ে শরিফা।
বিয়ের কিছুদিন পর যৌতুকসহ নানা অজুহাতে স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগমের নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিজে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাদের নির্যাতন সহ্য করে গর্ভের সন্তানের আলোর মুখ দেখাতে স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকেন শরিফা।
এদিকে চলতি রমজান মাসে তার পিত্রালয় থেকে ইফতারি দিতে দেরি করায় এবং ইফতারির সাথে বরের জন্য আলাদাভাবে সাজানো থালা না দেয়ায় অন্তঃসত্ত্বা শরিফার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় শরিফার পিত্রালয় থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজনের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না আসাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে আরশ আলী ও মিনারা বেগম মিলে মারপিট করেন শরিফাকে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শরিফা তার ভাইকে অবগত করে পরে কথা বলবে বলে ফোন রেখে দেন। এমতাবস্থায় সেহরির সময়ে শরিফার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পান তার ভাই-বোনেরা।
শনিবার বড় বোন শিপন আক্তার শরিফার স্বামী-শাশুড়ির জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আরশ আলীর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিলেই পথিমধ্যে শরিফার ভাশুরের মাধ্যমে খবর পান তার বোন খুবই অসুস্থ। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আবার খবর আসে শরিফা আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছে।
একইভাবে খবর পেয়ে দুপুরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের বড় বোন শিপন আক্তার ও ভাই মিনার হোসেন বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আমার বোনের ওপর তার স্বামী ও শাশুড়ি যৌতুকসহ নানা অজুহাতে নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতনের কারণে আমরা তাকে নিয়ে যেতে চাইলেও গর্বের সন্তানের অভিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমার বোন সব কিছু নীরবে সহ্য করে যেত। আমরা গরিব মানুষ লকডাউনের কারণে অভাব-অনটনে চলতি রমজান মাসে ইফতারি পাঠাতে দেরি ও আরশ আলীর জন্য আলাদা করে সাজানো থালা না দেয়ায় তার স্বামী ও শাশুড়ি শরিফাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। সর্বশেষ নতুন কাপড় পাঠাতে দেরি করায় তারা আমার বোনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়ে তার গর্ভের সন্তানটিকেও আলোর মুখ দেখতে দিলো না।’
এ অবস্থায় ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বনিক বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ঘটনাটি সর্বত্র জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার জড় শুরু হয়। এতে সবাই ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক দাবি করেন।