বাবুল তার স্বামীকে দিয়ে মিতুকে হত্যা করতে বাধ্য করেছেন বলে খুনের ৫ বছর পর জানিয়েছেন মিতু হত্যার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার। এদিকে স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যাকাণ্ডে পাঁচ বছর পর গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার পুলিশকে তার বাসার ভুল ঠিকানা দিয়েছেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও তাই বাবুল আক্তারের ঢাকার ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে।
শুক্রবার বিষয়টি মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নজরে আসে বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার। এর আগে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে পান্না বলেন, আমি মুসার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তোমরা কেন এমন একটি জঘন্য কাজ করলে? এখন আমার সন্তানদের কী হবে? আমার কী হবে? তখন মুসা জানিয়েছিল, বাবুল আক্তার তাকে শেল্টার দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাবুল আমার স্বামীকে চিন্তা না করতে বলেছেন। তারপর আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। সেখান থেকে আজ পাঁচ বছর আমি মুসার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমি মুসার খোঁজ চাই।
চট্টগ্রাম তাকে যেতে নিষেধ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমি কথা বললে আমাকে জঙ্গি বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছিল। একারণে আমি প্রচণ্ড ভয়ে থাকতাম। সাবেক এসপি বাবুলের সোর্স মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার দাবি করেছেন, মিতুকে হত্যার পর বাবুল মুসাকে ফোন করে তাকে সাবধানে থাকতে বলেছেন। পুলিশের সেই সময়কার ক্ষমতাধর এই কর্মকর্তা মুসাকে শেল্টার দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। বাবুলের ভয়ে এতদিন বিষয়টি গোপন করেছেন জানিয়ে পান্না বলেন, পরিবার, সন্তান ও আমার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আগে কথা বলি নাই। কারণ আমি বাবুল আক্তারকে ভয় করতাম। আর বাবুল আক্তারের পরিচিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার পর থেকে আমাকে হুমকি দিতেন। আমি তাদেরকে ভয় পেতাম।
মুসা স্ত্রী দাবি করেন, মুসা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সেজন্য ভয় পেতাম। সব মিলিয়ে আগে মুখ খুলিনি আমি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আজ পাঁচ বছর আমার স্বামী নিখোঁজ। তার সন্ধান চাই আমি। মামলার জন্য হলেও তো মুসাকে দরকার। কারণ সে সবকিছু জানে। সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নির্দেশে তার স্বামী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছিলেন বলেও দাবি করেন পান্না আক্তার। মিতু খুনের পর তার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল দাবি করে পান্না বলেন, এরপর আমি হত্যার বিষয়ে মুসার কাছে কয়েকবার জানতে চেয়েছিলাম। প্রথমে মুসা কিছু বলেনি। পরে এক সময় মুসা আমাকে জানায়, বাবুলের নির্দেশে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হতে বাধ্য হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বন্দরনগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ২০১৬ সালের ৫ জুন খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।