টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
লবণাক্ততা রোধে ডেল্টা প্ল্যান

লবণাক্ততা রোধে ডেল্টা প্ল্যান

জার্মান ওয়াচের তথ্যমতে, বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম

বিপর্যয়ের যে ক’টি কারণ আছে তার মধ্যে লবণাক্ততা অন্যতম। ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে এই সমস্যা। জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম- সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরগুনা। পুকুর, ডোবা-নালা, নদী ও খাল-বিলের পানিতে লবণাক্ততা রয়েছে বরিশালসহ আরও কয়েকটি জেলাতেও। লবণাক্ততা রোধে সরকারের শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-তে আছে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে এমন অনেক জেলা আছে যেখানকার নদী-খালে ছয়মাস পানি থাকে, বাকি ছয়মাস শুকনো মৌসুম। ওই সময় ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে থাকে। আবার সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪০টি উপজেলাজুড়ে আছে বিস্তৃত ভাটি অঞ্চল। একই দেশে এমন পার্থক্যের জন্য দায়ী করা হয় জলবায়ু বিপর্যয়কেই। এসব জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড’-এর বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও এ মহাপরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে।


ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের সুবিধা

এতোসব সমস্যার পাশাপাশি ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের কিছু সুবিধাও রয়েছে।

প্রথমেই আছে উর্বর জমি। এখানকার মোট ভূমির ৬৫ শতাংশই কৃষিজমি। ১৭ শতাংশ বনভূমি। ১০ শতাংশ জলাভূমি ও ৮ শতাংশ শহর এলাকা। নদ-নদী আছে সাত শ’রও বেশি। জলাভূমির মোট আয়তন ৪ দশমিক ৭০ মিলিয়ন হেক্টর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সমুদ্রপথে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে এর কারণে। গতিশীল অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাও রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৬ হাজার কিলোমিটার।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন রয়েছে বাংলাদেশে। যার আয়তন প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জলভাগ ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ হেক্টর। সমৃদ্ধ প্রতিবেশও রয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ২টি রামসার সাইট, ১৪টি ইসিএ (ইকলোজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া), ১৭টি জাতীয় উদ্যান, ২৮টি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, ৮টি ইকোপার্ক এবং ২টি বোটানিক্যাল গার্ডেন। ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ইসিএ হলো- হাকালুকি হাওর (১৮ হাজার ৮২ হেক্টর), টাংগুয়ার হাওর (৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর), সোনাদিয়া দ্বীপ (৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর), সেন্টমার্টিন দ্বীপ (৫৯ হেক্টর) এবং টেকনাফ উপদ্বীপ (১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর)।

সরকারের ডেল্টা পরিকল্পনায় ইসিএতে ৮০০-এর বেশি প্রজাতি চিহ্নিত করা গেছে বলে উল্লেখ রয়েছে।


ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

ব-দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

১। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা: ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা ১.৪ থেকে ১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

২। বৃষ্টিপাতের তারতম্য: ২০৩০ সালের মধ্যে বৃষ্টিপাত বাড়বে বাংলাদেশে। তবে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমার আশঙ্কা রয়েছে।

৩। বন্যার আশঙ্কা: দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এতে বন্যার আশঙ্কাও প্রবল।

৪। নদী ভাঙন: প্রতিবছর নদীভাঙনে প্রায় ৫০ হাজার বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

৫। লবণাক্ততা ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ এলাকায় ১ পিপিটি এবং ২৪ শতাংশ এলাকায় ৫ পিপিটি পর্যন্ত বাড়তে পারে।

৬। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়তে পারে।

৭। জলাবদ্ধতা।

৮।পলি জমা।

৯। আন্তঃদেশীয় নদী ব্যবস্থাপনা।

পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জাতীয় কৌশল

সরকারের এক শ’বছরের প্রণীত ডেল্টা প্ল্যানে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জাতীয় কৌশলপত্রে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

এর জন্য যেসব কার্যক্রম নিতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

  1.  বেসিন ওয়াইড পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
  2.  প্রধান নদীগুলোয় নতুন সেচ প্রকল্প গ্রহণ এবং স্থানীয় পর্যায়ের বিদ্যমান জলাধার যেমন ডোবা, বাওর, পুকুর পুনঃখনন এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে পানি সংরক্ষণ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ।
  3.  সম্ভাব্যতা জরিপের মাধ্যমে রাবার বাঁধ নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন। (বর্তমানে ৩৫০টি রাবার বাঁধ কার্যকর রয়েছে)।
  4. আঞ্চলিক নদনদীগুলোর প্রবাহ বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ। নদী ও জলাভূমি পুনরুদ্ধারে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব প্রদান। ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ ও তা সংরক্ষণ।

আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা

সরকারের ডেল্টা প্ল্যানে আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি কৌশলের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

  • ক) উজানের নদীগুলো থেকে পানি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
  • খ) উজানের পানি প্রবাহের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা।
  • গ) পানিসংক্রান্ত কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান এবং সংঘাত প্রতিরোধ করা।
  • ঘ) তিস্তার পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন তৎপরতা অব্যাহত রাখা।
  • ঙ) চাহিদাভিত্তিক যৌথ নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ।
  • চ) পানিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষকে (বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশ) সম্পৃক্তকরণ এবং অববাহিকাভিত্তিক বন্যার পূর্বাভাস পদ্ধতির উন্নয়ন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, এ সব সমস্যা নিরসনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল-ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়। চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে সেভাবেই ২০৩০ সাল নাগাদ প্রথম ধাপে ৮০টি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্য দিয়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাদুপানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। সমাধান হবে প্রকট খরা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগও।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ অনুমোদন পায়। এর আগের ৪৭ বছরে দেশে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়নে বহু পরিকল্পনার পরও সরকার আগামী ১০০ বছরের জন্য ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করে।

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital