সরকারের সঞ্চয়পত্রে ঋণনির্ভরতা বাড়ছে
এর ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরে (২০২১-২০২২) শুধুমাত্র সঞ্চয়পত্র থেকেই ঋণ নেয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের চেয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি নির্ধারণ করা হচ্ছে। শতকরা হিসাবে যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু অর্থবছরে প্রথম আট মাসে ঋণ নেয়ার এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও দেশের মানুষ যে হারে সঞ্চয়পত্র কিনছে বা এখাতে বিনিয়োগ করছে তাতে বছর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে বিধিনিষেধ আরোপ করে সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ নিরুৎসায়িত করতে পারছে না সরকার। কারণ এখাত থেকে ঋণ নেয়ার সরকারের জন্য ব্যয়বহুল। গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্র অস্বাভাবিক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ২০১৯ সালে এখাতের ওপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে- আগে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কোনো ক্রেতাকে কর শনাক্ত নাম্বার বা ই-টিআইএন জমা দিতে হতো না। কিন্তু গত বছরের শুরু থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সাথে পুরো বিক্রি কার্যক্রমটি এখন অন-লাইনের মাধ্যমে মনিটর করা হচ্ছে। এখন কেউ আর ইচ্ছা করলে, সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বা একই নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে পারবে না। এ নিয়ম চালুর পর গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৭০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল। যেমন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় মাত্র ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। কিন্তু তারপর আবারো নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রকেই বেছে নেয় মানুষ। কারণ ব্যাংকের টাকা রাখলে বছর শেষে মুনাফা পাওয়া যায় পাঁচ থেকে ছয় ভাগ। মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে এই মুনাফা তো থাকেই না উপরন্তু ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন তা কমে যায়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে এখন মুনাফার হার ১০ ভাগের ওপরে রয়েছে।
এদিকে বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা), ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা) ঋণ নেয়া হয়েছে। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তারপও বছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা।