টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা

একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা

নাম লুৎফুন্নাহার হেলেন। ১৯৭১ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে রাজাকারেরা লুৎফুন্নাহার হেলেনকে তাঁর শিশুপুত্র সহ ধরে নিয়ে তুলে দিয়েছিলো পাকিস্তান আর্মির হাতে। একজন অসামান্য আলোকিত মানুষ ছিলেন হেলেন। প্রখর মেধাবী মেয়েটি মেট্রিক পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা ইডেন কলেজে। চাচাতো ভাই, বামপন্থী ছাত্রনেতা আলী কদরের সাথে বিয়ের পরে মাগুরা ফিরে এসে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রী পাশ করেন দুর্দান্ত রেজাল্ট নিয়ে।  শিক্ষকতায় যোগ দেন মাগুরা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে। নিজে জড়িত ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতিতে, কলেজ সংসদের নির্বাচিত নেত্রী। রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ হলে প্রতিবাদে লিখেন হেলেন, আয়োজন করেন রবীন্দ্র উদযাপন।
ভাইবোন সহ মাগুরা শহরের কিশোর-তরুনদের পড়ালেখা ও সংস্কৃতি চর্চার বাতিঘর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আলী কদর নেতৃত্ব দেন বামপন্থী গেরিলা গ্রুপের। মাগুরার মোহাম্মদপুর থানা দখল করে অনেকগুলো গ্রাম নিয়ে তাদের মুক্তাঞ্চল। মাগুরা শহরে হেলেনদের বাড়ি হয়ে উঠে দালালদের প্রধান টার্গেট। ১৬ বছরের জাহাঙ্গীর কবীর রাজাকারদের হাতে বন্দী হয়ে নির্যাতিত হন।  হেলেনকে ও খুঁজতে থাকে তারা। লুৎফুন্নাহার হেলেন তাঁর দুবছর পাঁচ মাসের শিশু নিয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান, সেখানে নারীদের সংগঠিত করেন।
আলী কদর চলে যান পাশের শালিখা থানা দখলের যুদ্ধে। এই সুযোগে ইসলামী ছাত্র সংঘের এক পান্ডা হেলেনকে দেখে ফেললে রাজাকাররা তাকে ধরার পূর্ণ শক্তি নিয়ে তল্লাশী শুরু করে। নৌকায় লুকিয়ে থেকে রক্ষা পাননি হেলেন। দু বছর পাঁচ মাসের শিশু কোলে একজন মায়ের এভাবে লুকানো অসম্ভব।
রাজাকারেরা দ্রুত তাঁকে নিয়ে আসে মাগুরা শহরে, তুলে দেয় পাকিস্তানীদের হাতে। শুরু হয় নির্যাতন। তাঁর সহকর্মী এক শিক্ষক, জামাতে ইসলামীর পান্ডাও ছিলো নির্যাতনে। জানা যায়, পাকিস্তানী সেনা অফিসার দ্বিধায় ছিলো দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা’কে হত্যা করবে কিনা? কিন্তু আলবদররা চাপ দেয়  হত্যা করতেই হবে।  ৫ অক্টোবর লুৎফুন্নাহার হেলেনকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নবগঙ্গা নদীতে। লাশ পাওয়া যায়নি আর। শিশু সন্তানকে অবশ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
তারপর, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারকে একটি চিঠি এবং দুই হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে  বাংলাদেশ সরকার তাঁর নামে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করে৷ অথচ মাগুরা শহরে শহীদ লুৎফুন্নাহার হেলেন এর কোন নাম নেই, স্মৃতি চিহ্ন নেই। নেই তাঁর কলেজে, তাঁর পড়ানো স্কুলে, নেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকে।
সম্ভবত, যুদ্ধের মাঠ থেকে ধরে এনে হত্যা করা একমাত্র নারী বুদ্ধিজীবি শহীদ লুৎফুন্নাহার হেলেন। আরেকটু সম্মান, আরেকটু স্মৃতিচারন তো তাঁর পাওনা ছিলো!

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital