রাজধানীতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের মানুষ। কোনো কোনো সড়কে জমেছে হাঁটু পানি, কোথাও কোথাও ফুটপাত পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। টোটকা সমাধান দিয়ে কোনোভাবেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশে প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাাদক ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান।
মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে যে সমস্ত ক্যারিং ক্যাপাসিটি তা ধারণক্ষমতার তিনগুণ হয়ে গেছে। তবে সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগতভাবে আমরা কেউই উদ্যোগী হচ্ছি না। কিভাবে বড় বড় ইমারত, ভবন নির্মাণ করতে পারি সেসব নিয়ে ভাবছি। যখন ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাবে তখন টোটকা সমাধান দিয়ে কিছুই হবে না বলেও জানান তিনি।
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, নগর সাজানোর সময় আমরা মূলত কিছু প্লানিং করে থাকি। যেখানে আমাদের খোলা জায়গা, সবুজ উদ্যান থাকা উচিত। পাশাপাশি ৩০-৩৫ ভাগ খোলা জায়গা থাকা উচিত। যার ফলে পানি ভূগর্ভে সহজেই চলে যেতে পারে। একটি নগরে রাস্তা থাকার কথা ২০ ভাগের মতো, সেখানে আমাদের শহরে রাস্তা আছে ৮ ভাগের মতো। রাজধানীতে আজ ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা থাকলে এই বৃষ্টি খুব সহজেই নিষ্কাশন হয়ে যেত।
প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকায় দ্রুত পানি নামতে না পারায় প্রতিবারই এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই মতিঝিল, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, পুরান ঢাকা, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া বছর ঘুরে নিয়মিত চিত্র।
ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশের নগর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের নগরের মধ্যে কিছু ভেরিয়েশন থাকবে। যেমন বাংলাদেশের নগরে বৃষ্টিপাত বেশি, মধ্যপ্রাচ্যের নগরে বৃষ্টিপাত অনেক কম। যা প্রতিটা সিটির জন্য আলাদা কিছু প্লানিং থাকে। সে হিসেবে একটা নগরে রাস্তা থাকবে ২০ ভাগ, অন্যান্য অবকাঠামো থাকবে ৩০-৩৫ ভাগের মতো, আর ২০ ভাগের মতো থাকবে সবুজায়ন, ১৫ ভাগের মতো থাকবে জলাশয়। এমন স্তর বিন্যাসই নগরকে তৈরি করে। রাস্তাঘাট যতটুকু হবে তার সাথে মিল রেখে সবুজায়ন বা অন্যান্য অবকাঠামো থাকতে হবে। একটা শহরে ধূসর স্ট্রাকচার হওয়ার কথা ৫০ ভাগের মতো।
মোটাদাগে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজধানীর এই জলাবদ্ধতা নিরসনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা কেউই সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। সবার চোখের সামনেই খালগুলো দখল হয়েছে। এতোসংখ্যক খাল দখল হতো না। প্লানিং-এ একটা ভাষা আছে ‘ক্যারিং কেপাসিটি’। ইতোমধ্যে এই সিটির যে সমস্ত ক্যারিং ক্যাপাসিটি তা ধারণক্ষমতার তিনগুণ হয়ে গেছে। তবে সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগতভাবে আমরা কেউই উদ্যোগী হচ্ছি না।
কিভাবে বড় বড় ইমারত, ভবন নির্মাণ করতে পারি সেসব নিয়ে ভাবছি। যখন ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাবে তখন টোটকা সমাধান দিয়ে কিছুই হবে না বলেও জানান তিনি।
জলাবদ্ধতার এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে তিনি বলেন, রাজধানীতে এখন ৮২ ভাগ আচ্ছাদিত এলাকা হয়ে গেছে। চাইলেই এটাকে অপসারণ করা সম্ভব না। তাই এখন থেকেই উত্তরখান-দক্ষিণখান এলাকাগুলো রক্ষা করা। নয়তো সেগুলোর অবস্থাও ধীরে ধীরে ঢাকার মতো হয়ে যাবে। একটা শহরে কতটুকু জায়গা খালি রাখতে হবে, কতটুকু জায়গা ভরাট করতে হবে এই ব্যাপারগুলো শিখতে হবে। ঢাকা শহরের অধিকাংশ নর্দমারই ৩০-৪০ জায়গায় বন্ধ রয়েছে। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে লোকালি যে ময়লা আবর্জনা পড়েছে সেটা গত ১০ বছরেও কেউ পরিক্ষার করেছে কিনা মনে হয় না।
সিটি কর্পোরেশনকে জোর দেবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয়দের নিয়ে সমন্বিতভাবে পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালাতে হবে। অতিবৃষ্টির এ শহরে কৃত্তিম সমাধানে সুফল বয়ে আসবে না। মূলত প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে একটা সুষ্ঠু সমাধান করাই বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, ৬ তারিখের পর আবার ঢাকা ও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়বে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ভারী বৃষ্টিপাত বলে। ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিকে বলা হয় মাঝারি বৃষ্টিপাত, আর ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিকে বলে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত।