এলাকাবাসীর কাছে ঘটনাটি শুনে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম শিশুটির বাড়িতে যান। এ সময় শিশুটির মা তাঁকে বলেন, গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে সেলিম হোসেন (৪৫) তাঁর মেয়েকে জোরপূর্বক আটকে ধর্ষণ করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান ধর্ষণের অভিযোগ সত্য কি না, তা নিজে পরীক্ষা করে দেখবেন বলে জানান। তিনি শিশুটিকে একটি ঘরের ভেতর নিয়ে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করে কিছুই পাননি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে জানান।
বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিকেলে ইউপি ভবনে সালিস ডাকেন। সেখানে উভয় পক্ষকে থাকতে বলেন। বিকেলে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে অভিযুক্ত সেলিম হোসেনকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল। ভুক্তভোগী পরিবার থানায় যেতে চাইলে চেয়ারম্যান এই মীমাংসা মেনে নিয়ে ঘটনাটি এখানেই শেষ করার জন্য ভুক্তভোগী পক্ষকে বলেন।
পরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে চাঞ্চল্য তৈরি করলে থানা-পুলিশের নজরে আসে। তাদের সহযোগিতায় শিশুটির মা বাদী হয়ে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সেলিম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। তাঁরা আজ বুধবার সকালে আসামিকে গ্রেপ্তার করে দুপুরে আদালতে পাঠান। আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সেলিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তা ছাড়া চেয়ারম্যান মেয়েটিকে চেক করে দেখেছেন, কিছুই পাননি। তারপরও সালিসে আমাদের ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামের কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাখালগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনার একটি অভিযোগ নিয়ে তাঁর কাছে শিশুটির মা এসেছিলেন। তিনি থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। নিজে পরীক্ষা বা অভিযুক্তকে জরিমানা করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। এসব কিছুই তিনি করেননি বলে জানান।
এদিকে ফেসবুক থেকে ঘটনাটি জানাজানির পর প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার সকালে কালীগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই কর্মসূচির আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে জোটের নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। তাঁরা শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সভাপতি শান্ত জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান দীপ্তি রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিয় মজুমদার, নির্বাহী সদস্য এম এ সালাম, শাহীনুর আলম, জেলা নাট্য সমন্বয় পরিষদের সভাপতি রুবেল পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক তারেক হোসেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উইয়ের নির্বাহী পরিচালক শরিফা আক্তার প্রমুখ।