১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ছয় দফা আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ।
পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ছয় দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এই ৬-দফা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করে এবং ছয় দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়।
ছয় দফা বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ছয় দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ছয় দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় দফার প্রতি বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।
ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথ পরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোনীত প্রার্থীদের একচেটিয়া রায় প্রদান করে।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে তখনই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেও ছয় দফার প্রতিটি দফার পর্যালোচনা ছিল। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ৬ দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ছয় দফার ভূমিকা অপরিসীম।
ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে এলেও এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে দিবসটির কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
এদিকে, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান এবং ই-পোস্টার প্রকাশ করেছে।