অনশনকারি কামরুন্নাহারের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কোরাজ মিয়ার মেয়ে। কামরুন্নাহার গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। অন্যদিকে, অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষকের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি চকপাড়া গ্রামের আকাবর আলীর ছেলে। রফিকুল স্থানীয় পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও দুই সন্তানের জনক।
এ ঘটনার পর থেকে রফিকুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে কামরুন্নাহার ইতোমধ্যে ইউএনও এবং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার বিকালে কামরুন্নাহার বলেন, তার সাথে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ছোট বোন আলেয়া (২৭) পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। সে সুবাদে রফিকুল ইসলাম তার বোনের কাছে গাজীপুরে মাঝে-মধ্যে বেড়াতে আসতো। এক পর্যায়ে রফিকুলের সাথে তার মন দেয়া-নেয়া শুরু হয়। এ সম্পর্ক চলে প্রায় ৭ বছর।
এই সময়ের মধ্যে রফিকুল কামরুন্নাহারকে জানাননি যে তিনি বিবাহিত। প্রেম চলাকালীন সময়ে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে রফিকুলকে বিয়ে করার জন্য বললে তিনি এক মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়ান, কিন্তু ওই সময় কাবিননামা সম্পন্ন হয়নি। কামরুন্নাহার আরও বলেন, গত ১৭ মে কাবিননামা করে দিতে বললে শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া বাজারের মন্টু নামে এক কাজীর মাধ্যমে একটি কাবিননামা তৈরি করা হয়। এ সময় ওই কাজীর কাছে কাবিননামার নকল চাইলে তিনি আগামী ৮ দিন পর তা দেয়া হবে বলে জানায়। নির্দিষ্ট সময় পর কাবিনের নকল আনতে ওই এলাকায় গেলে কাজীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ৭ জুন ঝিনাইগাতীর ইউএনও এবং থানা পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এছাড়া কাবিননামার দাবিতে অনশন শুরু করেন কামরুন্নাহার।
রফিকুল ইসলামের ছোট বোন আলেয়া জানায়, কামরুন্নাহার ঝিনাইগাতীতে তার ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতেও বেড়াতে আসতো। বিয়ের কাবিন না হলেও সংসার করেন তারা। এক পর্যায়ে কামরুন্নাহার বিয়ের কাবিনের জন্য চাপ দিলে রফিকুল নানাভাবে টালবাহানা শুরু করেন। উপায়ান্ত না পেয়ে কামরুন্নাহার অনশন শুরু করে। এ ঘটনার পর থেকে তার ভাই গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জাবাবে আলেয়া বলেন, আমার বান্ধবীকে (কামরুন্নাহা) বিয়ে করবে বলে ভাই রফিকুল স্ত্রী-সন্তানদের কথা কামরুন্নাহারকে না জানাতে অনুরোধ করেন। তার স্ত্রী ঝিনাইগাতী শহরে থাকে। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখার মতো কেউ নেই। এ কারণে বাড়িতে একজন কাজের লোকের দরকার। তাই কামরুন্নাহারকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিল। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিনুর রহমান উকিল অনশনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, মাদ্রাসাশিক্ষক রফিকুল ইসলাম ইসলাম এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
ঝিনাইগাতী থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু গাজীপুর, তাই মামলা সেখানেই হওয়ার কথা। তারপরও এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।