সোমবার সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ সালাম কবির এ তথ্য জানান। শনিবার মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গোয়ালদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিঠুন কুমার বালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে চক্রের অন্য সদস্য হামিদুল মোল্লাকে ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তাদের মধ্যে হামিদুল মোল্লা নামে একজন চট্টগ্রামের বিকাশ এজেন্টের দোকানে দোকানে গিয়ে কৌশলে রেজিস্ট্রারের ভিডিও করেন। সেই ভিডিও পাঠিয়ে দেন মাগুরার মিঠুন কুমার বালার কাছে। এতে কোনো ব্যক্তি বিকাশে টাকা পাঠালে তার টাকার পরিমাণ, প্রেরক ও প্রাপকের মোবাইল নম্বর চলে যায় মিঠুনের কাছে। এরপর গ্রাহকের কাছে ফোন করে তথ্য হালনাগাদ, প্রলোভন ও অসুবিধার কথা বলে পিন, সিকিউরিটি বা ভেরিফিকেশন কোড নিয়ে নেয় তারা।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসকে কেন্দ্র করে প্রতারণার নানা পদ্ধতি বের করেছে তারা। এভাবে গ্রাহকের একাউন্টে থাকা সব টাকা নিজেদের একাউন্টে স্থানান্তর করছে প্রতারকরা। সেই টাকাগুলো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাশ করে তারা। মিঠুন কুমার বালা (২৬) হলেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গোয়ালদাহ এলাকার শিশির কুমার বালার ছেলে। আর হামিদুল মোল্লা (২২) হলেন একই থানার নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর এলাকার মৃত আলীম মোল্লার ছেলে।
জানা গেছে, প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা এমনভাবে ফাঁদ পাতে যে, গ্রাহক কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। অনেক সময় ‘এসএমএস’দিয়ে ব্যালেন্স যোগ হওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে সরাসরি টাকা চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ‘হেল্পলাইন’থেকে ফোন করে একাউন্ট হালনাগাদ, নতুন অফার চালুসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহককে দিয়ে কয়েকটি ‘বাটন’চাপিয়ে কৌশলে টাকা স্থানান্তর করে নেয়া হচ্ছে অন্য একাউন্টে।
সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ সালাম কবির জানান, গ্রেপ্তার দুইজন অপরাপর ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলো। চক্রের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন বিকাশের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে অবস্থান নেয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা স্মার্টফোনের ক্যামেরা অন করে বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকানে গিয়ে সুকৌশলে লেনদেন বইয়ের ভিডিও ধারণ করে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। একপর্যায়ে বিকাশের খাতার ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে চক্রের সদস্যদের কাছে এলাকা উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভিডিও দেখে বিভিন্ন গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিকাশ কর্মকর্তা সেজে সেসব নাম্বারে ফোন করে কৌশলে পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ আত্মসাৎ ও খুব কৌশলে তারা প্রতারণা করে থাকে। এভাবে হাতিয়ে নেয়া টাকা বিভিন্ন হাতবদল করে ক্যাশ আউট করে, ফলে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। কিন্তু টাকার পরিমাণ অল্প হলে পুলিশের কাছে মানুষ অভিযোগ করে না। বর্তমানে নানাভাবে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত এসব প্রতারকদের আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দোকানের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের খাতার কেউ যাতে ভিডিও বা ছবি তুলতে না পারে সেদিকে দোকানিদের নজর ও গ্রাহককে সতর্ক হতে হবে।