টিভি ব্রেকিংঃ
ঝিনুক টিভির পক্ষথেকে সকল দর্শকদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঝিনুক টিভি আসছে নতুন নতুন সব আয়োজন নিয়ে। পাশেই থাকুন
৬৪ জেলাই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে

৬৪ জেলাই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে

মাগুরা জেলায় সোমবার ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলাটির সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৬ শতাংশে। শুধু মাগুরাই নয় দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের অনেক জেলার করোনায় সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান (২৭ জুন সকাল ৮টা থেকে ২৮ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ৬৪টি জেলার করোনার সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে , যেসব স্থানের শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বা তার বেশি সেসব স্থানকে সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে হলে উচ্চ ঝুঁকি এবং পাঁচ শতাংশের কম হলে কম ঝুঁকির স্থান হিসেবে ধরা হয়। এ হিসেবে দেশের ৬৪টি জেলাই এখন অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা পরীক্ষা করাতে আসছেন, শুধু তাদের একটি সংখ্যা মাত্র। দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ হবে। তাই যারা আক্রান্ত তাদের চিহিৃত করে দ্রুত আলাদা করা জরুরী। এছাড়া সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করা গেলে এ পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করবে বলেও তাদের আশঙ্কা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে আছে আমার মনে হয় তার চেয়ে অনেক বেশিই আছে। যারা পরীক্ষা করতে আসছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেগুলো রেকর্ড করছে সেগুলোই আমরা জানছি। কিন্তু যারা আসেননি তারা আসলে কত? সেটা আমরা চিন্তাও করতে পারছি না।’

এই সংক্রামক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সামান্য লক্ষণে অনেকে তো আসেনই না। আবার অন্তত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষের করোনার লক্ষণই দেখা দেয় না। কারণ তাদের ভিতরে ইতিমধ্যেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। অথচ তাদের টেস্ট করলে করোনা শনাক্ত হবে। তারাও ভাইরাস ছড়াচ্ছে। সুতরাং আমরা পরিস্কার কিছু জানি না। ‘

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেল্থ ইমারজেন্সি এন্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের (২৭ জুন সকাল ৮ টা থেকে ২৮ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ১৩ টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা বিভাগে মোট শনাক্তের হার প্রায় ২০ শতাংশ। এখানে মোট ২০ হাজার ২০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৯৯৮ জনের শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন অব্দি মোট শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৬ জন। নতুন ২৭ জনসহ এখন অব্দি মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ হাজার ৫৪০ জন।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ২০.৩৩ শতাংশ। এখানে মোট ১ হাজার ৩৪৩ জনের নমুনা পরিক্ষায় ২৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ১৯৯ জন। নতুন ৫ জনসহ এখন অব্দি মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০৭ জন।

চট্রগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ২২.৪৮ শতাংশ। এখানে মোট ৩ হাজার ৬০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ১৪৮ জন। নতুন ১৯ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৭১১ জন।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ২০.৬০ শতাংশ। এখানে মোট ৪ হাজার ২৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৫ জন। নতুন ৭ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৯০ জন।

রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ৪২.২০ শতাংশ। এখানে মোট ১ হাজার ২৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৬৩ জন। নতুন ৯ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৮৭ জন।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ৪৬.২৮ শতাংশ। এখানে মোট ৩ হাজার ১৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন অব্দি মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ২৬৩ জন। নতুন ৩৫ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ২০০ জন।

বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ৩৮.৭৬ শতাংশ। এখানে মোট ৪৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৭ হাজার ২৪০ জন। নতুন ২ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১৮ জন।

সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার সবকটিতে ১০ শতাংশের বেশি। বিভাগটিতে মোট শনাক্তের হার ৩০.৭৫ শতাংশ। এখানে মোট ৭৬১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিভাগটিতে এখন অব্দি মোট শনাক্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৬ জন। সোমবার নতুন মৃত্যুর খবর না এলেও এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৫২৩ জন।

সোমবার দেশের সর্বমোট মোট ৩৫ হাজার ৫৯ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৮ হাজার ৩৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে শনাক্তের হার ২৩.৮৬ শতাংশ। আর নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় অদ্যাবধি সংক্রামণের হার ১৩.৭১।

এখন পর্যন্ত সর্বমোট মোট ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৪০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে নতুন ১০৪ জনসহ করোনায় সর্বমোট ১৪ হাজার ২৭৬ জনের প্রাণ গেছে । নতুন ৩ হাজার ৫৭০জনসহ ৮ লাখ ৭ হাজার ৬৭৩ জন সুস্থ্ হয়েছেন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি (২৪ জুন) দেশের ৪০টি জেলা করোনা সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে জানায়। পরে গত ২৬ জুন সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন (সিআরআইডিএ) জানায়, ৫৯টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন সর্বশেষ পরিস্থিতি বলছে, দেশের ৬৪টি জেলার করোনা সংক্রামণের হার ১০ শতাংশের বেশি।

ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানুর মতে, প্রতিদিন যে সংখ্যায় শনাক্ত হচ্ছে মোট জনসংখ্যার হিসেবে ধরা যাবে না। যেদিন নমুনা পরীক্ষা বেশি হচ্ছে সেদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়। তার মানে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য এখনো কিছুই জানা যাচ্ছে না।

করোনা নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘ভারতে দিনে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। তারা দিনে অন্তত ২০ লাখ টেস্ট করেছে। আর আমাদের দেশে কত হয়? ২০/২৫ হাজার! এটি অতি নগন্য। আর আমাদের দেশে মানুষ হলো আঠারো কোটি। সুতরাৎ আমরা রিয়েল ফিগার পাচ্ছি না। করোনা নিয়ন্তণ করতে হলে আসল সংখ্যাটা জানা জরুরী। যারা যারা আক্রান্ত তাদের দ্রুত চিহিৃত করে আলাদা করা দরকার। স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করা দরকার। আর নয়ত আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।’

শেয়ার করুনঃ

Comments are closed.

© All rights reserved © 2020 | jhenuktv.com
Developed BY POS Digital