বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজুর রহমান গত শুক্রবার (২ জুলাই) আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্যাতন এবং হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম জানান, আসামি উজিরপুর থানায় রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাটি তদন্তের আদেশ দেন। একই সঙ্গে বরিশালের পুলিশ সুপারকে হত্যা মামলাটি তদন্ত করতে বলেন আদালত।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন আজ আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, ওই নারী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নির্যাতনের যে বিবরণ ওই নারী আদালতকে দিয়েছেন তা জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম। অভিযোগকারীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২৮ জুন গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায়।
পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাকে লাঠি দিয়ে প্রহার করে। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং ২৯ জুন তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
আদালতকে তিনি জানান, এদিন তাকে মারধর না করা হলেও পরদিন সকালে তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে পাঠানো হয়। তিনি তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। এরপরে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে নিয়ে তাকে আবার লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।
এক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই তাকে ১৫-২০ মিনিট ধরে পেটান। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পান।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে নেয়ার আগে পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে খুনের অপরাধ স্বীকার করতে বলেন।
এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল বলেন, ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি গ্রামে একটি ডোবা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাসুদেবের ভাই পরদিন ওই ডোবা সংলগ্ন বাড়ির এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২৮ জুন ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুন তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো নির্যাতন করিনি। এটা একবারেই মিথ্যা অভিযোগ।’
হত্যা মামলার বাদী বরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামি আদালতে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনছেন এটা শুনেছি।’
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হাসান খান বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনার কথা শুনেছি। এখনও আমরা লিখিত নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’