পাবনার চাটমোহরে নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছেন ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। প্রশাসনিক পদক্ষেপ না থাকায় ডিলাররা বেশি দাম নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতাদের নিকট থেকে। তাই খুচরা বিক্রেতারাও বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত ভোক্তা ঠকে আসলেও যেন দেখার কেউ নেই।
বিশ্ব বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে সর্বশেষ গত ৩০ জুন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপিজির দাম সমন্বয় করে। ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) এ মূল্য সমন্বয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৮৯১ টাকা নির্ধারণ করে। এ সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে ১২ কেজি এলপিজির সৌদি কনট্যাক্ট প্রাইজ ৫৩৭ টাকা, জাহাজ ভাড়া এবং ট্রেডারের প্রিমিয়াম চার্জ ৯৭ টাকা, অন্যান্য চার্জ ৬ টাকা, মজুত করণ ও বোতলজাত চার্জ ১৪৩ টাকা, মূসক ৫৭ টাকা, পরিবহন খরচসহ ডিস্ট্রিবিউটর চার্জ ২৪ টাকা, রিটেইলার চার্জ ২৭ টাকা দেখানো হয়। সে হিসেবে কোন ডিস্ট্রিবিউটর ১২ কেজি এলপিজি সর্বোচ্চ মূল্য ৮৬৪ টাকা নিতে পারেন। রিটেইলার ৮৯১ টাকার বেশি নিতে পারেন না। এমনটি হওয়ার কথা থাকলেও ডিস্ট্রিবিউটর বা রিটেইলার কেউই প্রকৃত দামে এলপিজি বিক্রি করছেন না। জুন-২১ মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪২ টাকা।
গত ৪ জুলাই রবিবার চাটমোহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ডিলাররা বসুন্ধরার ১২ কেজি এলপিজি ১ হাজার টাকায়, ওমেরা ৯৯০ টাকায়, যমুনা ৯৯০ টাকায়, বেক্সিমকো ৯৯০ টাকায়, জি গ্যাস ৯৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। বসুন্ধরা ডিলার বিকাশ সাহার ব্যবস্থাপক বিশ্বনাথ জানান, বসুন্ধরার ১২ কেজি সিলিন্ডার ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা। কোম্পানীর নিকট থেকে তারা এ দামেই এলপিজি কিনছেন এবং তাদের কোন লাভ থাকছে না বলেও জানান। জি গ্যাস ডিলার শিবলী সাদিক রাশেদের ইনচার্জ মানিক হোসেন জানান, ১২ কেজি এলপিজি বোতল তারা রিটেইলারের নিকট ৯৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। যমুনা’র স্থানীয় ডিলারের ব্যবস্থাপক রাজীব জানান, আমাদের ডিও পরছে ৯৯৩ টাকা। আমরা পাইকারী ৯৯০ টাকায় বিক্রি করছি। খুচরা ১০৩০ থেকে ১০৪০ টাকায় বিক্রি করছি। বেক্সিমকোর ডিলার পার্থ সাহাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
খুচরা বিক্রেতারা প্রতি ১২ কেজি এলপিজি ১০২০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। তারা জানান, আমরা যে দামে কিনছি তার সাথে পরিবহন খরচ ও লাভ বাবদ ৩০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছি। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লকডাউনের অজুহাতে অধিকাংশ ডিলার এলপিজি বিক্রি না করায় সংকটের সৃষ্টি হচ্ছিল। উপজেলার হরিপুর গ্রামের বিপ্রদাস সরকারসহ একাধিক ভোক্তা জানান সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চাটমোহরের কোন ডিলার বা রিটেইলার এলপিজি বিক্রি করছেন না। ১২ কেজি এলপিজির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৯১ টাকা হলেও রিটেইলাররা ১০২০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে আমাদের এলপিজি কিনতে হচ্ছে। প্রতি সিলিন্ডারে আমরা প্রায় ১শ থেকে ১৫০ টাকা ঠকছি।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম জানান, কোন ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করতে পারেন না। বিষয়টি আমি খুব দ্রæত খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।