নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন তাজুল ইসলাম। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় থাকা ২৫-৩০ জন শ্রমিককে দড়ি দিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে আনেন তিনি।
তাজুল ইসলাম ওই ভবনের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) হিসেবে কর্মরত। শ্রমিকদের ছাদ থেকে নামাতে গিয়ে তাজুল ইসলাম নিজেও কিছুটা আহত হন।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার ওই ফ্লোরে বেশির ভাগই ছিলেন নারী শ্রমিক। আগুন মুহূর্তেই কারখানায় ছড়িয়ে পড়তে থাকলে ধোঁয়া ঢুকতে শুরু করে ফ্লোরে। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় নিয়ে এক পর্যায়ে তারা চলে যান ছাদে। সেখান থেকেও নিচে নামার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। ঠিক এমন সময় তাজুল ইসলাম তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। দড়ি দিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে আনেন ২৫-৩০ জন নারী শ্রমিককে। তাদেরকে নামাতে নামাতে নিজেই অনেকটা আহত হয়ে পড়েন তাজুল।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই কাজটি করেছি। আমি নিজেই এখন একটু অসুস্থ। তাই আর আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।
তিনি জানান, বিকাল ৫টার দিকে তিনি ওই ভবনের ৫ তলায় ইলেকট্রিকের কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে গ্যাসের গন্ধ পেয়ে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে চারদিকে ছুটতে থাকেন। এ সময় আগুন লাগার খবরে ৬ষ্ঠ তলার শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে ভবনের ছাদে চলে যান। তিনি (তাজুল) শ্রমিকদের রক্ষার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ওপরে দড়ি পাঠালে তাজুল ইসলাম একাই ২৫-৩০ জন নারী শ্রমিককে নিচে নামিয়ে আনেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই রাতেই মারা যান ৩ জন। শুক্রবার দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৪৮ মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসব লাশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশগুলো ডিএনএ পরীক্ষার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় শুক্রবার পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।