মহামারী করোনা ভাইরাস ও সংক্রমনে মৃত্যুর হার ও নতুন রোগী শনাক্তের দিক বিবেচনায় দেশে প্রতিনিয়ত রেকর্ড গড়লেও সচেতন-অসচেতন, শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও তরুণ-বয়স্ক কেউ-ই সরকারের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছেন না। শহর-গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই সুযোগ পেলে চায়ের দোকানে আগের মতো জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন, মুখে মাস্ক ব্যবহার না করেও হাটবাজারে হরহামেশা ঘোরাঘুরি করছেন। উঠতি বয়সী তরুণদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অহেতুক রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আবার বয়স্কদের বেশির ভাগই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে এখনো তেমন সচেতন হয়ে উঠেননি। ফলে মুখে মাস্ক ব্যবহার না করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় গ্রামগুলোতে অদৃশ্য গজব মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব সামনে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এমনটি আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের জনৈক শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকদের কাছে সেখানকার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এখানকার বেশির ভাগ লোকজনেরই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আগ্রহ দেখি না। যখন তখন মানুষজন গাদাগাদি করে বাজার করছে, এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানাতো দূরের কথা মুখে মাস্ক পর্যন্ত পরে না। তারা আরও বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানে, অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে, আবার সেরে উঠছে, করোনায় মারাও যাচ্ছে। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে লোকজন কেন জানি উদাসীন!
শেরপুর উপজেলার বাসিন্দা মো: শাহরিয়ার মাহমুদ স¤্রাট জানান, এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। তার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। কিন্তু এলাকার লোকজন এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন। হাতেগোনা কিছু মানুষ মাস্ক পরে। তবে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সচেতন-অসচেতন কেউ-ই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না। দেদার হাটবাজার চলছে, আড্ডা, চা খাওয়া সবই চলে আগের মতো।
শেরপুর উপজেলার চকখাগা গ্রামের নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক এক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে জানান, এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, কেউ-ই মাস্কও ব্যবহার করে না। অসুস্থ যারা তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, সুস্থ মানুষও মুখে মাস্ক ব্যবহার না করে অহরহ ঘোরাঘুরি করে। আমরা দু-চারজন যারা মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হই নিজেদের কাছেই লজ্জা লাগে! এখানকার লোকজনের চলাফেরা দেখলে মনে হয় না দেশে করোনা আছে! জ্বর সর্দি কাশি অহরহ; কিন্তু তরুণ আর বয়স্ক কেউ-ই সচেতন নয়, কেউ-ই স্বাস্থ্যবিধি মানে না। সুযোগ পেলেই মাঠেঘাটে জমিয়ে আড্ডা চলে।
দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিলেও এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিংবা করোনাভীতি চোখে পড়ে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে এটা এখানকার লোকজনের বেশির ভাগই বিশ্বাস করতে চায় না। তিনি বলেন, প্রতিদিনই যে যার মতো কাজ করছে, আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু মুখে মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যে দরকার- এসবের ধারেকাছেও কেউ নেই। হাতেগোনা কিছু লোকজন স্বাস্থবিধি মেনে চলে।
শেরপুর উপজেলার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, ঈদের পরে কঠোর লকডাউনের কারণে তার ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে ঠিকই; কিন্তু গ্রামের লোকজনের আড্ডা দেয়া, চা খাওয়া কিন্তু বন্ধ নাই। একটু সুযোগ পেলেই কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যে যার মতো ঘোরাঘুরি করছে, আড্ডা দিচ্ছে, বাজারসদাই করছে। মোটকথা, এলাকায় তরুণ আর বয়স্ক, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত সবার বেশির ভাগই মুখে মাস্ক না পরেই চলাফেরা করে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাত পরের ব্যাপার।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন বলেন, প্রতিনিয়ত শেরপুর উপজেলায় করোনা রোধকল্পে জনসচেতনা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদন্ড করা হচ্ছে। করোনরা রোধকল্পে সরকারি বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।