ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গে এক অভিভাবকের ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার (ভাইরাল) ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তারকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর অপর সদস্য হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন।
কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটির কেউই কোনো বক্তব্য দেননি।
এদিকে, ওই ফোনালাপের কথাগুলো নিজের নয় বলে দাবি করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। বিষয়টি ‘ষড়যন্ত্র’ বলেও দাবি তার। গতকাল সোমবার কামরুন নাহার বলেন, ‘সুপার এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের একাংশ প্রকাশ করা হয়েছে। অভিভাবক মীর সাহাবুদ্দিন টিপু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন জানিয়েছিল। আমি ভর্তি করাইনি। করোনার মধ্যে প্রায় ৪০ জন অভিভাবক নিয়ে এসে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। আমি করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে অফিসে দেখা করতে বলেছিলাম। আমাকে অভিভাবক টিপু আল্টিমেটাম দিয়ে চলে যান। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা যাচাইয়ে শিক্ষা প্রকৌশলকে লিখিত দিয়েছিলাম। সেটির তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ভর্তি বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণের কারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এসব কারণে আমারে সরিয়ে দিতে তারা পরিকল্পনা করেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন অর্ধেক করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি (টিপু)। গভর্নিং বডির সদস্যদের কেউ কেউ শিক্ষকদের অসম্মান করেন। এসব প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন।’
অপরদিকে, যে অভিভাবকের সঙ্গে অধ্যক্ষ ফোনালাপে কথাগুলো বলেছেন তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের উপদেষ্টা মীর মো. শাহাবুদ্দীন টিপু। তিনি জানান, অধ্যক্ষের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কী কারণে কামরুন নাহার এভাবে কথা বলেছেন তা তিনি জানেন না।
গতকাল সোমবার টিপু বলেছিলেন, ‘সম্প্রতি প্রায় ৪০ জনের মতো অভিভাবককে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের দাবির কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বিদায় করেছেন। আমিও তাকে বলে এসেছি ৩০ তারিখের মধ্যে অভিভাবকদের কাজগুলো করে দিতে হবে। করোনা বিপর্যস্ত অভিভাবকদের টিউশন ফি মওকুফের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি তা করেননি।’ এসব কারণে ফোনালাপের অডিও ফাঁস করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মীর সাহাবুদ্দিন টিপু। ফোনালাপের খন্ডিত অংশের ব্যাপারে মীর সাহাবুদ্দিন টিপু জানান পুরো ফোনলাপ দিতে পারবেন তিনি।
৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের খণ্ডিত অডিওতে শোনা যায়, তিনি অভিভাবক মীর সাহাবুদ্দিন টিপুকে বলছেন, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো … বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব, আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি দেশছাড়া করব।’
অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যে চলা ওই কথোপকথনে কামরুন নাহার আরও বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না করি কার বাপের কী? আমি রাজনীতি করা মেয়ে, আমি কিন্তু ভদ্র না।’
কামরুন নাহার আরও বলেন, ‘আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। ওই … পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কামরুন নাহারকে গত বছরের ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।