শখের বশে বেশ কয়েক বছর যাবত ভারতীয় উন্নত জাতের ছাগল পালন করে আসছেন পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের নতুন বাজার মহল্লার মরহুম ডাঃ মনিরুজ্জামানের ছেলে সারোরার ফয়সাল। ২৬ বছর বয়স্ক সারোরার ফয়সাল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করে ইন্টার্নশীপ করছেন। পশু পাখির প্রতি তার দূর্বলতা ছোট বেলা থেকেই। ভালবাসা থেকে ছাগল পালন শুরু করে ৭ বছরের মাথায় এসে এখন তার সংগ্রহে রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন উন্নত ব্রীডের ৭২ টি ছাগল। কেবল পাবনা নয় উত্তর বঙ্গের মধ্যে ভারতীয় উন্নত জাতের সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে তার সংগ্রহে।
সারোয়ার ফয়সাল জানান, “ আমি ২০১০ সাল থেকে ছাগল পালন শুরু করি। প্রথমে কিছু দিন দেশী জাতের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন করলেও ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় উন্নত জাতগুলো পালন ও সংরক্ষণ শুরু করি। ২০১৪ সালে ভারতীয় ২ টি তোতাপুরী, ২ টি হরিয়ানা ও ৪ টি শংকর জাতের ছাগল দিয়ে দি কিংস এগ্রো নামক এ খামারটি শুরু করি। পরে অন্য জাতের আরো কিছু ছাগল সংগ্রহ করি। এখন আমার খামারে ২২ টি রাজস্থানের জাবলা তোতাপুরী, উত্তর প্রদেশের ১৩ টি হরিয়ানা, পাঞ্জাবের ১১টি বারবারি, ৯ টি নর্থ আমেরিকান বারবারি, শিরোহী জাতের ৫ টিসহ মোট ৭২ টি ছাগল রয়েছে। ছাগল গুলোর বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। ইতি মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ টাকায় ৪০টি ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করেছি। ছাগল গুলো দেখা শুনার জন্য সার্বক্ষণিক ২ জন লোক নিয়োগ করা রয়েছে। এতে দুজন ব্যক্তির কর্ম সংস্থান হয়েছে। ছাগল গুলোকে কাঁচাঘাস, খড়, কাঠালের পাতা ও দানাদার খাদ্য খাওয়াই। প্রতিদিন ২১০০ টাকার খাবার খায় ছাগল গুলো। প্রাণী সম্পদ অফিস সংশ্লিষ্টরা সব সময় দেখাশুনা করেন। বছরে ২ বার ভাকসিন দেই ও ৩ বার কৃমির ঔষধ খাওয়াই। আমার ছাগল পালন দেখে এলাকার অনেকে উৎসাহী হয়ে ভারতীয় জাতের ছাগল পালন শুরু করেছেন।” তিনি আরো জানান, খোকা বাবু, শের খাঁন, পাশা, মাইজু, মজনু, গুড্ডু, লালন, বাদশা, গুড়িয়া, হুররাম এরক বিচিত্র নাম এক একটি ছাগলের। ওদের বেশির ভাগই আমার কথা শোনে, আমার ডাকে সাড়া দেয়। ভাল লোকবল ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে হরিণের খামার করার চিন্তা করছেন তিনি। ছাগলের খামার পাহাড়া দেওয়ার জন্য তার রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা দামের একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর। পুরো খামার নিয়ন্ত্রিত হয় ৬টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা। গত মে মাসে ময়মনসিংহ থেকে সাড়ে ৩ মাস বয়সী একটি দুম্বা কিনে পরীক্ষা মূলক ভাবে পালন করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ রোকনুজ্জামান জানান, ভারতীয় উন্নত জাতের ছাগল পালন লাভ জনক। আমরা মানুষকে এটি পালনে উৎসাহিত করি। আবহাওয়াগত কারণে এর বেশি যতœ নিতে হয়। বিশেষত সৌখিন খামারীরা এসব জাতের ছাগল পালন করেন। তবে আমাদের দেশের ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন ও লাভজনক। ভয়ের কারণ হচ্ছে, ভারতীয় উন্নত জাতের ছাগলের সাথে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল প্রজনন করালে শংকর জাতের ছাগল হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশী ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কাল ক্রমে বিলুপ্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।