হযরত ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহিম (আ)। হযরত ইউসুফ (আ) যেমন ছিলেন মহান নবিদের সন্তান, তেমনি ছিলেন উন্নত চরিত্র, সুদর্শন ও পবিত্র জীবনের অধিকারী এক মহান নবি।
বৈমাত্রেয় ভাইদের চক্রান্তে কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর মিশরগামী ব্যবসায়ী কাফেলার মাধ্যমে কূপ থেকে উদ্ধার পান। অতঃপর ভাইয়েরা কাফেলার নিকট গোলাম হিসেবে ১৮ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। উক্ত কাফেলা ইউসুফ (আ)কে মিশরের উজিরের নিকট বিক্রয় করে দেয়। মিশরের উজিরের নিকট লালিতপালিত হন তিনি।
যখন ইউসুফ (আ) যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন তার স্ত্রী জুলেখা তাকে ফুসলাইতে থাকেন। একদিন জুলেখা ঘরের সাতটি দরজা বন্ধ করে কুপ্রস্তাব দেন। হযরত ইউসুফ (আ) জুলেখার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৌড় দিলে এক এক করে সাতটি বন্ধ দরজা খুলে যায়। সর্বশেষ দরজা খোলার পূর্বে জুলেখা ইউসুফ (আ)-এর পিছন থেকে তার জামা টেনে ধরলে সেই জামা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলেই জুলেখার স্বামীকে দণ্ডায়মান দেখতে পায়। তখন জুলেখা হযরত ইউসুফ (আ) সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়। পরবর্তী সময়ে উজির ইউসুফ (আ)কে জেলে দেন।
এ ঘটনার বর্ণনা হযরত মুসা (আ)-এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র তাওরাত শরিফের ‘হযরত ইউসুফ (আ) ও পোটফরের স্ত্রী’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। পরে সে পোটফরের কাছে এ কথা জানাতে গিয়ে বলল, ‘তুমি যে ইবরানি গোলামকে আমাদের কাছে এনেছ, সে আমাকে অপমান করার মতলবে আমার ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু আমি চিত্কার ও হাঁকডাক করায় সে আমার কাছে তার কাপড় ফেলে রেখেই বাইরে পালিয়ে গেছে।’ স্ত্রীর কথা শুনে ইউসুফের মালিক রেগে আগুন হয়ে গেলেন। কারণ তার স্ত্রী বলেছিল, ‘এমনি ধরনের ব্যবহারই তোমার গোলাম আমার সঙ্গে করেছে।’ তখন পোটফর ইউসুফকে জেলখানায় দিলেন। সেই জায়গায় বাদশাহর বন্দিদের আটক করে রাখা হতো।’ (পয়দায়েশ ৩৯ :১৭-২১)
এ ঘটনা সম্পর্কে সর্বশেষ রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর ওপর নাযিলকৃত সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ কুরআন মজিদে বর্ণিত আছে, ‘আর তারা দুজনে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা তার (ইউসুফ আ) জামা পেছন থেকে ধরতে গেয়ে ছিঁড়ে ফেলল। তারা দরজার কাছে তার (মহিলার) স্বামীকে দেখতে পেল।
মহিলাটি বলল, যে তোমার স্ত্রীর সাথে কুকর্ম করতে চায়, তার শাস্তি কী হতে পারে? জেলে পাঠান বা অন্য কোনো মারাত্মক শাস্তি প্রদান করুন’ (সুরা ১২ :ইউসুফ :২৫) “সে (আযিয গিন্নি) বলল, এই তো সে, যাকে নিয়ে তোমরা আমার নিন্দা করছিলে, আমি তাকে পটাতে চেয়েছি কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করেছে, যদি আমি যা আদেশ করছি তা না করে, তবে তাকে জেলে ভরা হবে এবং সে (ইউসুফ আ) নীচদের মধ্যে হবে।
সে (ইউসুফ আ) বলল, আমার রব তারা আমাকে যার দিকে ডাকছে তা থেকে জেল আমার বেশি পছন্দ। তাদের ফন্দি থেকে আমাকে বাঁচানো ছাড়া আমি এদের দিকে ঝুঁকে পড়ব এবং মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। তাই তার রব তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের ফন্দি থেকে তাকে বাঁচালেন। অবশ্যই তিনি সব শোনেন, সব জানেন। তারপর নজিরগুলো দেখার পর তাদের মনে হলো (সবচেয়ে ভালো) তাকে কিছুকালের জন্য জেলে রাখা।’ (সুরা ১২ :ইউসুফ :৩২-৩৫)।
ইউসুফ (আ)কে যে জেলখানায় রাখা হয়েছিল, তার নাম ‘সিজনুল আফিয়া’। ফেরাউনের এই জেলখানা ভূমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। বিচারের পূর্বে আসামিদের বা সামান্য অপরাধীদের এখানে এনে রাখা হতো। এই জেলখানা পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষের সুন্দর ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মিশরেই।